Poem

আমার সেই অরণ্য প্রবাসে, উপবাস-খিন্ন দেহের সামনে
তুমি পায়সান্নের বাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে না?
গাছতলার আলো ছায়ায় আর কেউ ছিল না
আমার সমস্ত শরীরময় ক্ষুধা
তবু আমি প্রথমেই সুঘ্রাণ চরুর জন্য লোভ করিনি
আগে দেখেছি তোমার পায়ের পাতা
পদনখে কয়েক সহস্র চাঁদ, আলতা রাঙা গোড়ালি
মাঝখানে লাল রঙের পৃথিবী
তারপর দুটি পা বেয়ে ওঠা হিলহিলে লাবণ্য
চালতা ফলের মতন গুল্ক, ভাঙা পর্বতশৃঙ্গের
মতন জানু
ছাল ছাড়ানো কলা গাছের মতন ঊরুদ্বয়
হে রম্ভোরু, আমি কেঁপে উঠেছিলাম
কোথায় গেল আমার ক্ষুধা ও ক্ষুদ্র তৃষ্ণা
তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়েছিলে সুমেরু
আড়াল করে
নাভিতে মেঘলুপ্ত চাঁদ
কী গভীর রহস্যময় যোনিদেশ
যেন বিষাদময় এক ঝর্নার উৎসমুখ
মরাল গ্রীবার মতন তোমার দুটি হাত
সদ্য ফোটা পদ্মের মতন দুটি সুগন্ধ স্তন
না, তোমার হাতে ধরা সোনার পাত্রটি আগে দেখিনি দেখেছি
তোমার ময়ূর-নিন্দিত গ্রীবা, দেখেছি
তোমার শিশু-সারল্যের থুতনি
নদীর বাঁকের মতন দুটি চোখ
উড়ন্ত ভুরু, দৃষ্টিতে বৃষ্টিস্নাত রোদ…
কীসের জন্য কেন যে বেঁচে আছি, তা জানি না
‘অয়ি’ বলে তোমাকে ডাকতে ইচ্ছে হয়
আর ফিরে আসবে না?
সমগ্রতায় যদি নাও আসতে পারো
শুধু দুটি রক্তিম পায়ের পাতা
নাভিতে সদ্য বিলুপ্ত চাঁদ, ভুরুতে অচিন পাখি
দাঁড়িয়ে থাকার নিস্তব্ধ সঙ্গীত, ঊরুর বিষণ্ণতা
কিছু একটা দেখা দাও
ধ্যান ভেঙে বসে আছি, দেখা দাও, দেখা দাও!

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 130

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts