Poem

কচ্ছপ শিকারীরা

আবুল হাসান

ওদের চোখে জলের কুহক আমরা বলি নদী
পা ডুবিয়ে দাহ ভেজাই জিহ্বা ভেজে তৃষ্ণা হরণ জলে।
ঐ জলেই বর্শা হাতে দাঁড়ায় ওরা দলেঃ

ওদের তখনো বাঁচার চিহ্ন কচ্ছপের পিঠে
সাঁতরে আসে সাঁতরে আসে জলেরই কংক্রিটে
কোমল কালো রহস্যের মৌন অলংকার
নদীর গ্রীবা শোভায় ঝরে কচ্ছপের হার!

আমরা ভাবি আদিজগৎ ফিরলো বুঝি প্রাণী
ওদের হাতে জীবনতৃষ্ণা ঝককে ওঠে বাণী,
বিদ্ধ করো! বিদ্ধ করে বিদ্ধ করে ওকে।
তিনদিকে তিন মূলশিকারী বর্শা তুলে তাঁকে
বরণ করে কচ্ছপের ধাবিত যাত্রাকে।

কালো কঠিন পেশীর কালো রৌদ্র ভরা দেহ
সঞ্চারিত হতো তখোন বর্শা ফলায় আর।
শিকারীদের শরীর থেকে সে এক চমৎকার
গতির ছায়া চমকাতো সেই কচ্ছপের পিঠে
মৃত্যু যাকে মরণ দিতো জলেরই কংক্রিটে।

ওদের হাতে কচ্ছপের করুতম লাশ
কোন অতলের উষ্ণতম আহার্যে নিশ্বাস
ফেলতো ওরা তখোন যে ঐ কচ্ছপের ঘ্রাণে
এখনো যারা সুন্দরের স্বচ্ছতম দাস
কেউ কি জানে? কেউ কি তারা জানে?

ওদের চোখে জলের কুহক, আমরা বলি নদী
দু তীর ঘেঁষে কত না দাহ, কত না সম্বোধি
কত না কালো চিহ্ন আর কত না বাঁচা মরা!
শিকারী ওরা সেই নদীতে এখনো জোড়া জোড়া
ভাসতে দেখে কচ্ছপ, না শিল্প? না কি সংহতির ভ্রূণ?

ওদের হাতে বর্শা ফলা, মহাকালের তুণ
জলের স্রোতে ভাসছে কত মৃত্যু আর ঘুণ

ওদের ওরা বিদ্ধ করে, বিদ্ধ করে আর
শিকার করে শিকার করে কালো জলের প্রাণী
আমরা যাকে নদীর কালো তিলক বলে জানি!
ওদের কাছে তারা কেবল চিহ্ন, বেঁচে থাকা।

কচ্ছপের পিঠের পরে দুইটি হাত রাখা
দেখেছিলাম কোথায় কোন শিকারী ওরা কবে
নৌকা নিয়ে যারা দুপুর জলেরই উৎসবে
উষ্ণ হতো সমুদ্যত হাতের দুটি শিরা
বর্শা নিয়ে দাঁড়াতো-সেই সূক্ষ্ম শিকারীরা।

কচ্ছপের শিকারী ওরা কালো জলের ভীড়ে
নদীর কটিদেশের কালো চিকন দুটি হাড়ে
বাঁধতে সেতু কর্ম আর ধর্ম জোড়া দ্বিধা
এখন সেই জলেই যেনো জলের অসুবিধা

কচ্ছপের হারের মতো সহজতম হার
হারিয়ে গেছে আদিজগৎ প্রাণের অভিধার।

তবুও হাতে বর্শা ফলা, তবুও অন্ধকার
শিকার করে নদীর গ্রীবা কচ্ছপের হার
ঐতো ওর চলছে, দেখি এখনো টানটান
ওদের হাতে বর্শা ফলা ওদের হাতে প্রাণ।

Author Bio

আবুল হাসান, জন্ম- ৪ আগস্ট ১৯৪৭ বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি যিনি ষাটের দশকের সঙ্গে চিহ্নিত। পেশায় তিনি সাংবাদিক ছিলেন। তার প্রকৃত নাম আবুল হোসেন মিয়া আর সাহিত্যিক নাম আবুল হাসান।

More

This post views is 199

Post Topics

Total Posts

159 Published Posts