Poem

নব ভারতের হলদিঘাট

কাজী নজরুল ইসলাম

বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট,
উদয়-গোধূলি-রঙে রাঙা হয়ে
উঠেছিল যথা অস্তপাট।

আ-নীল গগন-গম্বুজ-ছোঁয়া
কাঁপিয়া উঠিল নীল অচল,
অস্তরবিরে ঝুঁটি ধরে আনে
মধ্য গগনে কোন পাগল!
আপন বুকের রক্তঝলকে
পাংশু রবিরে করে লোহিত,
বিমানে বিমানে বাজে দুন্দুভি,
থরথর কাঁপে স্বর্গ-ভিত।
দেবকী মাতার বুকের পাথর
নড়িল কারায় অকস্মাৎ
বিনা মেঘে হল দৈত্যপুরীর
প্রাসাদে সেদিন বজ্রপাত।
নাচে ভৈরব, শিবানী, প্রমথ
জুড়িয়া শ্মশান মৃত্যুনাট, –
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব ভারতের হলদিঘাট।

অভিমন্যুর দেখেছিস রণ?
যদি দেখিসনি, দেখিবি আয়,
আধা-পৃথিবীর রাজার হাজার
সৈনিকে চারি তরুণ হটায়।
ভাবী ভারতের না-চাহিতে আসা
নবীন প্রতাপ, নেপোলিয়ন,
ওই ‘যতীন্দ্র’ রণোন্মত্ত –
শনির সহিত অশনি-রণ।
দুই বাহু আর পশ্চাতে তার
রুষিছে তিনটি বালক শের,
‘চিত্তপ্রিয়, ‘মনোরঞ্জন,
‘নীরেন’ – ত্রিশূল ভৈরবের!
বাঙালির রণ দেখে যা রে তোরা
রাজপুত, শিখ, মারাঠি, জাঠ!
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট।

চার হাতিয়ারে – দেখে যা কেমনে
বধিতে হয় রে চার হাজার,
মহাকাল করে কেমনে নাকাল
নিতাই গোরার লালবাজার!
অস্ত্রের রণ দেখেছিস তোরা,
দেখ নিরস্ত্র প্রাণের রণ;
প্রাণ যদি থাকে – কেমনে সাহসী
করে সহস্র প্রাণ হরণ!

হিংস-বুদ্ধ-মহিমা দেখিবি
আয় অহিংস-বুদ্ধগণ
হেসে যারা প্রাণ নিতে জানে, প্রাণ
দিতে পারে তারা হেসে কেমন!
অধীন ভারত করিল প্রথম
স্বাধীন-ভারত মন্ত্রপাঠ,
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট।

সে মহিমা হেরি ঝুঁকিয়া পড়েছে
অসীম আকাশ, স্বর্গদ্বার,
ভারতের পূজা-অঞ্জলি যেন
দেয় শিরে খাড়া নীল পাহাড়!
গগনচুম্বী গিরিশের হতে
ইঙ্গিত দিল বীরের দল,
‘মোরা স্বর্গের পাইয়াছি পথ –
তোরা যাবি যদি, এ পথে চল!
স্বর্গ-সোপানে রাখিনু চিহ্ন
মোদের বুকের রক্ত-ছাপ,
ওই সে রক্ত-সোপানে আরোহি
মোছ রে পরাধীনতার পাপ!
তোরা ছুটে আয় অগণিত সেনা,
খুলে দিনু দুর্গের কবাট!’
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট।

Author Bio

কাজী নজরুল ইসলাম, রাঢ় বাংলায় জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি কবি এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি

More

This post views is 58

Post Topics

Total Posts

365 Published Posts