Poem

মানুষের মানচিত্র ৩

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

মেম্বারের ছেলে দুটো ইশকুলে পড়ে,আমার হাঁড়িতে টান। বেশুমার দায় দেনা, খাওয়াইয়া সাতজন,পঙ্গু বাপ ঘরে, বেজাত আকাল যেন ঝাপায়ে পড়েছে এসে জীবনের ‘পরে। এতো যে সেয়ানা মাঝি, আমার নদীতে তবু বেজায় উজান।

আমি গাঙে নাও দিলে সব নাও পাছে পড়ে উজানে কি গোনে, আমার জীবন-নাও সবার পেছনে কেন তবু প’ড়ে রবে? পশরের গাঙে এক তুখোর জোয়ান মাঝি এই কথা ভাবে। চারপাশে অন্ধকার, সে তার বুকের ক্ষেতে এই প্রশ্ন বোনে।

রাত্রির গভীর হয়, তুফানের শব্দ বাড়ে, জলে জ্বলে নুন, দিনের রোদ্দুরে পোড়া তাতানো গতর থেকে গন্ধ আসে তার। জীবনের চাদ্দিকে হাতড়ায় মাঝি- আলো নেই, শুধু অন্ধকার, কাঞ্চা বাঁশের নাহান জোয়ান শরীরে তার ধ’রে গেছে ঘুন!

জলের সংসারে ভাসে তবু তো শিকড় তার রয়েছে মাটিতে, তবু তো শিকড় তার রয়েছে জীবনে, জীবনের পুষ্টিহীন উষর মাটিতে আজো, আজো মাঝি শুধে যায় জীবনের ঋন। জোয়ারের নাওখানি বার বার কাঁপে তার দুখের ভাটিতে।

রাত তো পোহায়ে এলো, লগি খুলে স্রোতে দিতে হবে নাওখান, আমার রজনী কবে পোহাবে দয়াল, ভাঙা নাওখানি কবে গোনে বা বেগোন স্রোতে জীবনের মত্ত গাঙে একধারা ব’বে! এ-প্রশ্নের চারা হবে সে কোন অঘ্রানে তার উত্তরের ধান?

Author Bio

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ - ২১ জুন ১৯৯১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি ও গীতিকার। তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম "বাতাসে লাশের গন্ধ"। এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার

More

This post views is 191

Post Topics

Total Posts

44 Published Posts