Poem

একদা এক রাজ্যে

সৈয়দ শামসুল হক

ওটা ছিল পার্কে যাবার রাস্তা; আর
যা আমাকে পেয়ে বসেছিল তা রোদন;
তুমি মনে করো, যদি মনে থাকে, সেই ছেলে তিনটের কথা
উলঙ্গ, উৎসর্গ ধূলায় যারা জননীর, যারা
তখন হাত পেতে দাঁড়িয়েছিল আমার তিনটে পয়সার জন্য;
আমি তখন প্যান্টের পকেটে হাত রেখে
— যা বলতে পারিনি —–
বানাতে পারছি না কান্নার বিরোধী বর্ম;
বাতাসে ফুলে উঠছে ফুসফুস
আমি সেই বাদাম তোলা জাহাজের মতো অচেনা সমুদ্রে;
তুমি ওভাবেই পছন্দ করলে বিদায়।

সিঁড়ির শেষধাপে যদি দাঁড়াতে, দাঁড়াতে পারতে;
আর তোমার পেছনে থাকতো সূর্য, সূর্যের আভা, সে আভায়
যদি শিথিল হয়ে আসতো ডাইনে বাঁয়ে পেছনে ধুলোয় দীর্ঘ
থামগুলো;
জ্বলতো, পুড়তো ছাইদানে ধূপ;
সঞ্চিত হতো রাত;
ছড়াতো, ছড়িয়ে পড়তো, তোমার মুখের মতো তাল তাল সৌরভ;
ওদিকে রাত্রি তার কনকনে হাওয়ায় চিৎকার করে বলতো —
‘এসো এই কবোষ্ণ গর্তে’;
কিন্তু আমরা সৃষ্টি করি আমাদের মৃত্যুকে
আর জীবনকে ফেলে রাখি ছুরির মতো বিপজ্জনক বাতাসে;
তোমার বিদায় ছিল এভাবেই।
তখন কি জানি কিসের জীবন্ত উল্লাসে জেগে উঠতে চেয়েছিল
জানালায় জনকের মুখ।
— দরোজায় নিশব্দ টোকা — দেখলাম
দেয়ালে আলো দিচ্ছে তাঁর হাতের সাঁড়াশি
যেন একটা মাছ।
দাঁতটা তুলতে হবে — ব্যথা করবে না —
না — না —
গরমের সকালে আমি চোখ বুঁজে অপেক্ষায় কাঁপছি
বারান্দায়, কাল রাতেও অন্ধকারে
যেখানে নড়ে উঠেছে স্বপ্নের ঘোড়া।

সরে দাঁড়ায়নি দেয়াল,
আমার পিঠের সঙ্গে হয়ে উঠেছে শরীর;
তোমার পেছনে ছিল দালান, দ্রুত মোটর,
স্টেডিয়ামের মোড়। বিজ্ঞাপন বাতির নৃত্যে
তোমার পাথরের মুখ আরেকটি অবশ্য অংশ —
আমি কি দেখেছি তোমাকে, তোমার বিদায়ে?
প্রতিহত তীব্র ধ্বনির মতো একটা জগৎ ছিল
যা গেছে;
জেগে উঠবো, আবার, এভাবে, তােমাকে বিদায় দিতে
একদা এক রাজ্যে।

Author Bio

সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য

More

This post views is 283

Post Topics

Total Posts

45 Published Posts