Poem

তখন সকল প্রেম মরে যাবে

জীবনানন্দ দাশ

তখন সকল প্রেম মরে যাবে—সব প্রণয়ীরা
সূর্যাস্তের আভা আসে টের পেয়ে—সচকিত হরিয়াল পাখির মতন
অবসন্ন দীর্ঘ গ্রীবা সমান্তরালে রেখে—মিশে যাবে বাষ্পের ভিতরে
টের পাব হেমন্তের সংস্কারে—হয়তো ইরান সিন্ধুর দিকে চলে গেছে
হয়তো বা ত্রিভুজ নভের দিকে—বিস্ফারিত হেঁয়ালির মেঘে
হয়তো মৃত্যুর দিকে; —আমার এ চুপ—নিচু—মৃত্তিকার দেশে
শৈবাল হতেছে আরও ঋদ্ধ, কালো—নলখাগড়ার বনে নীড় আছে,
আকাঙ্ক্ষার মেধা

নদী নেই—অথবা সে নির্লোভ বায়ুর অস্পষ্টতা—অথবা সে জলপিপি
সব জল তার মৃত মসৃণ হিম এক নেউলের শরীরের ধূসরতা
তখন স্থবির আমি—তুমি—আমি;—ডানা ভেঙে গেছে ব’লে সেই
দূর ঔপনিবেশিক
সৌর উদযাপনে উড়িতে পারিনি মোরা সহোদর পাখিদের মতো
তখন নিস্তব্ধ মোরা—পাতার মতন, শামুকের মতো, পাথরের মতো
হেমন্তের রাত্রি এল বলে—বিপরীত প্রদীপের থেকে তবু ম্লান
আলো,—প্রতিকূল পর্দার পাশে—ধূসর অন্তিম ঘ্রাণ—নীরবতা নয় তবু
(আমাদের) যৌবনে রৌদ্রাক্ত দিন ছিল—লোভ ছিল—মনে হবে—আজও
ঘুমায়ে রয়েছে কে বা স্বর্ণশীর্ষ মনীষার মর্মর মেঝের পরে
কেউ ঘুমে নেই;—আমাদেরও নিস্তব্ধতা বায়ু পাবে—পাঁজরের হিম হাসি
উষ্ণ হবে
মোম খেয়ে—যাহারা যেতেছে মরে—যাহারা গিয়েছে মরে—
বহুদিন—পৃথিবীতে
সেই সব নিঃসম্বল ভূতের ভিতরে দু—একটা দানো ছিল—হয়তো বা তুমি—
সেই সব নিঃসম্বল ভূতের ভিতরে দু—একটা দানো ছিল—হয়তো বা তুমি—
বেত্রবতী নদী যেন বানীরের বনে রুষ্ট—আলাপী পেঁচার মতো আমি
কথা কব, কথা কব সারা রাত—আবার বলিব গল্প জীবনের গভীর রগড়ে
নব নব মৃত শিল্প, নষ্ট শস্য, অবিরল উজ্জীবিত ধূষ ইঁদুরের
নব নব উন্মেষ শালিকী বুদ্ধি ব্যাপ্ত ইঁদুরের।

Author Bio

জীবনানন্দ দাশ, ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মিলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের

More

This post views is 536

Post Topics

Total Posts

151 Published Posts