Poem

অ্যাপোলোর জন্যে

শামসুর রাহমান

অ্যাপোলো তোমার মেধাবী হাসির সোনালি ঝরনা
শিশু পৃথিবীর ধূসর পাহাড়ে এখনও কি রবে লুপ্ত?
আমরা এখানে পাইনি কখনো বন্ধু তোমার
সোনালি রুপালি গানের গভীর ঝঙ্কার,
শাণিত নদীর নিবিড় বাতাস মানবীর মতো ডাকে চেতনার রাত্রে,
তবুও এখানে আমরা সবাই বিবর্ণ রোগী পৃথিবীর পথে,
হৃদয়ের রং মনের তীক্ষ্ণ ক্ষমতা ফেলেছি হারিয়ে।
ত্র্যাপোলো তোমার মেধাবী হাসির সোনালি ঝরনা
শিশু পৃথিবীর ধূসর পাহাড়ে এখনও কি রবে লুপ্ত?

রাত্রি। রাত্রি। অথই রাত্রি। নীল সমুদ্র মনের কিনারে ফুলছে।
অতিদূর ধু-ধু সময়হীনতা সময়ের কোনো তন্দ্রাকে মুছে
নির্জন সেই আকাশপ্রদীপে, শিশিরে জলে কাঁপছে।
দেয়ালে টাঙানো হরিণের ছালে অরণ্যমতী জীবনের গাঢ় কান্না,
অরণ্য তুমি ক্ষমা করো শুধু-চেতনা প্রসারী।
মহতী গানের ধ্বনি বুকে পুষে তোমাকে ভুলেছি আমরা।
অতিদূর ধু-ধু সময়হীনতা সময়ের কোনো তন্দ্রাকে মুছে
নির্জন সেই আকাশপ্রদীপে, শিশিরের জলে কাঁপছে!

সান্ধ্যভাষার দীপ্তি জড়িয়ে কার যেন এক অপরূপ মুখ ক্ষুব্ধ
ক্ষুব্ধ আমার মনের ক্লান্ত গোধূলি-শিখায়, জানালার প্রীত আকাশে।
চোখের গভীরে সুদূর-অতল কাস্পিয়ানের টলটলে নীল কেঁদেছে,
অত্যাচারের হিংস্র ব্যথায় নিজের হাতেই ছিঁড়েছে বুকের
সোনালি হরিণ দীর্ণ সে-নারী ফাল্গুনি মন হারাল?
তবুও একটি গভীর-রুপালি পূর্ণিমা জ্বলে মানবীর ছেঁড়া হৃদয়ে।
ক্লীব সমাজের প্রবীণ ক্ষমতা কেড়েছে অনেক
প্রণয়ী মনের উজ্জ্বল আর নরম রজনীগন্ধা।
রাত্রি। রাত্রি। অথই রাত্রি। নীল সমুদ্র মনের কিনারে ফুলছে!

অ্যাপোলো শুনছ? নামল এখানে যাদের ধূসর সন্ধ্যা,
পৌষ এসে ডাক দিয়েছে তাদের শূন্য ভাঁড়ারে
ঠোঁটে তুলে নিতে ইঁদুরের মতো মৃত্যু!
ধু-ধু প্রান্তরে আনাগোনা করে ‘প্রাচী’র প্রাচীন ছায়ারা,
ম্লান ঘোড়াদের আর্ত চোখের বিষণ্ন রোদে
খুঁজব কি বলো মধ্যযুগের ক্লান্তি?
নেমেসিস-হাসি কেঁপেছে আবার প্রাণ ঝরে ফের জীবনের মানচিত্রে,
অ্যাপোলো! অ্যাপোলো! প্রবাল ঠোঁটের, চেতনা-প্রসূত-
সোনালি রুপালি মেয়েরা এখানে আসবে?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 155

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts