Poem

বুদ্ধদেব বসুর প্রতি

শামসুর রাহমান

বারবার স্বেচ্ছাচারী জ্যোৎস্না কেটে গিয়েছেন হেঁটে
সম্পূর্ণ একাকী, সঙ্গী মুক্তবোধ। চোখে নাগরিক
দৃশ্যাবলি গেঁথে নস্টালজিয়ায় মেদুর গলায়
কবিতার ডাকনাম ধরে ডেকেছেন কী ব্যাকুল।
জলের গভীরে ব্যালে উজ্জ্বল মাছের, দেখে দেখে
কেটেছে অনেক বেলা আপনার। সে-ও এক খেলা,
যা’ নেয় গোপনে শুষে মেদমজ্জা, জীবনের মধু।
জলের ঈষৎ নড়া অথবা ফাৎনার ডুব দেখে

বুক করত ধুক পুক। জল ভাগ করে আচমকা
কখনো গিয়েছে বেঁকে ছিপ মধ্যরাতে, তুলেছেন
কত মাছ একান্ত শিল্পিত প্রক্রিয়ায়; মেরুদণ্ডে
গিয়েছে শিরশিরে স্রোত বয়ে অগোচরে কখনোবা।

সহসা আপনাকেই নিল গেঁথে অদৃশ্য বড়শিতে
আরেক খেলায় মেতে অন্য একজন, কায়াহীন,
অথচ কী শঠ, ভয়ংকর। যখন লুকিয়ে ছিল
সে অদূরে বারান্দায় কিংবা বাথরুমে অন্ধকারে,

তখন না-লেখা কবিতার পংক্তিমালা আপনাকে
ঘিরে ধরেছিল বুঝি জোনাকির মতো, হয়তোবা
লন্ড্রির রঙিন মেমো, কবিতার পাণ্ডুলিপি বুকে
করছিল গলাগলি নাকি সুধীন্দ্রনাথের স্মৃতি
অকস্মাৎ জেগে উঠেছিল দীপ্র, যেমন ঢেউয়ের
অন্তরালে দ্বীপ, হয়তো অসমাপ্ত বাক্য সে মুহূর্তে
মগজের কোষে কোষে হয়েছে মায়াবী প্রতিধ্বনি।
শব্দেই আমরা বাঁচি এবং শব্দের মৃগয়ায়।

আপনি শিখিয়েছেন পরিশ্রমী হতে অবিরাম।
অফলা সময় আসে সকলেই মাঝে মাঝে, তাই
থাকি অপেক্ষায় সর্বক্ষণ। যতই যাই না কেন দূরে
অচেনা স্রোতের টানে ভাসিয়ে আমার জলযান।

হাতে রাখি আপনার কম্পাসের কাঁটা; ঝড়ে চার্ট
কখন গিয়েছে উড়ে, চুলে চোখে-মুখে রুক্ষ নুন,
অস্পষ্ট দিগন্তে দেখি বৌদ্ধ মুখ। আপনার ঋণ
যেন জন্মদাগ, কিছুতেই মুছবে না কোনো দিন।

নিদ্রাতুর আঙুলের ফাঁক থেকে কখনো হঠাৎ
সিগারেট খ’সে গেলে চম্‌কে উঠে দেখি মধ্যরাতে-
স্মৃতির মতন এক অনুপম স্বপ্নিল বারান্দা
থাকে পড়ে অতরালে অন্তহীন, কবি নেই তার।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 144

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts