Poem

এ কেমন জায়গা? এখানে তো আসতে চাইনি কোনো দিন।
কখনো কি বাস্তবিক এই আঘাটায়
রেখেছি পা এমন জমিনে? ভেবেছিলাম এখানে
গোলাপের চারা
প্রচুর থাকবে পথে পার্কে গেরস্তবাড়ির টবে
ব্যক্তিগত উদ্যানে, অথচ
নরভুক গাছ শুধু কর্কশ, বিদ্বেষপরায়ণ, চতুর্দিকে
ভীষণ দিয়েছে মেলে হিংস্র ডালপালা।
আকাশ দু’ফাঁক করে একটি পা, অতিকায়, লাল,
নেমে আসে ছিত্তিছান করতে এ শহর। অভিশাপ
রেলপথে, নদীপথে, চরে চরে, বকুলতলায়, বারান্দায়
অভিশাপ, প্রহরে প্রহরে
ফুলের প্রতিটি কুঁড়ি কীট হয়ে সুপক্ব জামের মতো ঝরে।

পুরোনো গলির মোড়ে, টার্মিনালে, দরদালানের
ছায়াচ্ছন্ন কোণে
কপট বন্ধুর মতো আপাদমস্তক রহস্যের টোগা প’রে
নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু। ঘাতক প্রতিটি ঝোঁপ,
ল্যাম্পপোস্ট, প্রত্যেকটি দেয়াল এক্ষুণি
দেয়ালের গায়ে টলে পড়তে পারে।
বিপুল হাঁ করে
পথঘাট গিলে নিতে পারে ঘরবাড়ি, পথিক দোকানপাট,
ক্ষিপ্রগতি মোটরের ঝাঁক, বাস; ঘাতকের গন্ধ
ভাসে রেস্তোরাঁয়, সিনেমায় আর বিবাহ বাসরে।
আথিবিথি তাকাই অন্যত্র, তবু সেই ক্রুর গন্ধ।
ভেসে আসে সবখানে ধুলায় ঘাসে ঘাসে,
তবে কি লুকাবো মুখ ধ্বনিময় আদিম গুহায়?
চাই না এখানে কোনো শিশু কখনো ভূমিষ্ঠ হোক,
হলে সে নিশ্চিত আঁতুড়েই হবে ভীষণ দণ্ডিত।
চাই না এখানে কোনো তরুণীর বুকে ভালবাসা
একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া হয়ে মদির উঠুক জ’লে,
জ্বললে তা মিশমিশে অন্ধকার হবে নিমেষেই।
চাই না এখানে কোনো কবি লিখুন কবিতা আর,
লিখলে তা গাধার পায়ের নিচে কিংবা
নিষ্ঠীবনে, বিষ্ঠায় গড়াবে, ভস্ম হবে বহ্ন্যৎসবে।

একটি কান্নার দিকে হাঁটতে হাঁটতে কী ব্যাপক
ধ্বংসের ভেতর চলে যাই। আমার তো দহলা নহলা করে
কাটে কাল, উপরন্তু শূন্যের সহিত শূন্য ক্রমাগত
যোগ দিয়ে চলি ফলাফলহীন; আমার মনের মতো জায়গা
তবে কি অকূল আয়েন্দায় কোনো শূন্যের উদ্যান?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 129

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts