Poem

কাতরতা বেড়ে যায়

শামসুর রাহমান

কাতরতা বেড়ে যায়, মধ্যপথে বেড়ে যায় ব’লে
থমকে দাঁড়াতে হয় কিছুক্ষণ, এদিকে ওদিকে,
বিশেষত ছায়াচ্ছন্ন সুদীর্ঘ পেছনে কী উৎসুক
দৃষ্টি মেলে দিতে হয়। কত কিছু খসে হাত থেকে,
কী এক অস্পষ্ট কষ্ট অবশেষে শ্বাসকষ্ট হয়ে যায়
নিমেষেই, কুকুরের মতো কিছু দেখা যায় কিনা
আশে পাশে জনশূন্যতায়, দেখে নিতে চাই।

মধ্যপথে নিজেকেই দেখে আমি হয়েছি কাতর।
এখন পাথর বলে, এখানে মাথাটা রেখে তুমি
খানিক ঘুমাও, গাছতলা ডাকে ছায়া নেড়ে নেড়ে,
নদীতীর টলটলে আতিথেয়তার মখমল
হ’য়ে থাকে, পাখিগুলি ডানা মেলে বলে, পথচারী
এখানে ঘুমাও এসে কিছুকাল, পালকেরও আছে
স্বপ্ন বুননের শিল্প। মাথায় নিসর্গ গলে যায়।

মাথার ভেতর সূর্যোদয় ক্ষীয়মান, অস্তাচল
অত্যন্ত করুণ হ’য়ে আসে, একেকটি রাজহাঁস
আমার নিকট এসে গলে যযায় তুষারের মতো
পেছনে অনেক কণ্ঠ বেজে ওঠে, অলীক ঝংকার,
কখনো বা দীর্ঘশ্বাস, কান্না আমাকে স্বজন ভেবে
ঘিরে ধরে, বলে দূরে যেও না, সেখানে মিনারের
চূড়ায় শ্যাওলা আছে, শতাব্দীর কাতরতা আছে।

আমার বেবাক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলগা হ’য়ে আসে।
কোত্থেকে এমন ক্লান্তি উড়ে এলো? তবে কি আমিও
শূন্য, কাতরতাময় প্রান্তের তৃষ্ণায় পানি ভেবে
রুক্ষ মাটি খাবো শুধু? দেখবো ওপরে লোভাতুর
পাখিদের ক্রুর চক্র বারবার? এক্ষুণি আমাকে
আহত পাঁজর খুঁড়ে ফোয়ারা জাগাতে হবে আর
দশটি আঙুল থেকে ছেড়ে দিতে হবে শত পাখি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 122

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts