Poem

হাঁটতে হাঁটতে শেষ অবধি

শামসুর রাহমান

(মতিউর রহমান বন্ধুবরেষু)

হাঁটতে হাঁটতে শেষ অবধি বেলাশেষ কোথায় যাব?
ঠিক জানি না।
এখন পথে রৌদ্র নেই, জ্যোৎস্না গেছে হঠাৎ উবে-
একটা কিছু মনে রেখে হাঁটতে থাকি, হাঁটতে থাকি
এই অবেলায়।
হাঁটতে হাঁটতে শেষ অবধি বেলাশেষে কোথায় যাব?

তোমরা যারা কাদার খেলা ভালোবাসো, হরহামেশা
তোমরা যারা
পথের বুকে হিংস্র কাঁটা দাও বিছিয়ে,
আড়াল থেকে তীর ছুড়ে দাও জহরমাখা, তাদের বলি-
বন্ধু শোনো,
তোমাদের ঐ পাকা ধানে মই দেব না, ছাই দেব না
বাড়া ভাতে।
তোমাদের সব কাকাতুয়া দুলবে দাঁড়ে, বিষ দেব না।
ভেব না ঠিক চায়ের সময় কথার ফাঁকে হাসতে হাসতে
হঠাৎ আমি
হাসতে হাসতে সজীব বুকে বসিয়ে দেব আমুল ছোরা।
আমার আপন দুঃখ-কষ্ট আমারই থাক, কাউকে কিছুই
ভাগ দেব না!
আমার বুকে বাঘের পায়ের দাগ বসে যায়,
আমার গায়ে ক্রুদ্ধ সাপের হিসহিসানি
লেগে থাকে,
আমার পিঠে ক্রূশের গাঢ় চিহ্ন আছে,
বুকের দু’দিক ক্রমাগত যাচ্ছে ক্ষ’য়ে।
সমাজজোড়া প্রতারণার প্রবল তোড়ে যাচ্ছি ভেসে,
কোন আমলে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলাম, মাঝে-মধ্যে
স্মরণ করি।

তোমরা যারা এলেবেলে আমার নামের ওপর শুধু
ছড়াও কালি,
ভয় পেয়ো না; অস্ত্রত্যাগের পরে কেমন
বিষাদে মন খুব ছেয়ে যায়, এখন শুধু দিতে পারি
ভালোবাসা।
ভালোবাসার স্বত্ব যদি ক্রোক করে নাও,
নিঃস্ব হয়ে মিছেমিছি কাঁদুনি আর গাইব না হে।

তোমরা যারা অন্ধতার এক চুক্তিপত্রে সই করেছ
অন্ধ রাত,
ভ্রান্তিভরা এই বলয়ে তারাই বুঝি আমাকে
বাৎলে দেবে?
অগ্রগমী দেবতাদের হাঁড়ির খবর জানা আছে
যখন খুশি পরের ভিটায় ঘুঘু চড়াও, এমনি আরও
কাণ্ডে তোমরা বেজায় দড় জানা আছে।
শববাহকের স্মৃতির মতো স্মৃতি ওড়ে ইতস্তত।

কী যে আমার প্রাপ্য ছিল ভুলেছি তাও হট্রগোলে।
কারো চোখের এক ফোঁটা জল স্বপ্ন হ’ল
রূপান্তরে,
শববাহকের কানের ফাঁকে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফুটেছে;
হাঁটতে হাঁটতে শেষ অবধি বেলাশেষে কোথায় যাব?
ঠিক জানি না।
ঠিক জানি না কেন যে এই নিশান পুঁতি পথে পথে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 368

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts