Poem

আশি দশকের পদাবলি

শামসুর রাহমান

একটি কেমন পাখি ছায়াকে স্বপ্নের মতো বাহার করে
ঘরের ভেতরে আসে। ডানা থেকে টেবিলে লাফিয়ে
পড়লো কবিতা লাল বলের মতন।
হকারের হাত থেকে খসে পড়ে ভোরবেলাকার
খবর-কাগজ, ঝকঝকে
লাইনো টাইপগুলি মনিপুরী নাচের ধরনে
ঘূর্ণমান কিছুক্ষণ, অনন্তর কবিতার মুখ।
শ্রাবণ ধারায় ভেজা ভাঙা জানালায়
রোদের ঝলক, জ্যোৎস্না রাতে
সরুগলি বোবা তরুণীর মতো স্তব্ধ; কলোনির
ফ্ল্যাট থেকে ঝুলে থাকে কবিতার হাত,
যেন ক্রূশকাঠে জেসাসের বিশীর্ণ সাধক হাত।

আমার দেরাজ খুলে দেখি
নিজস্ব কাগজপত্র, চিঠি, ক্যাশমেমো, লন্ড্রির রশিদ আর
স্মৃতির মতন গোলাপের পাপড়ি, কিছু ফটোগ্রাফ। অকস্মাৎ
একরাশ গন্ধরাজ কাঠ
দীর্ণ করে প্রস্ফুটিত দেরাজের ভেতরে। খরগোশ
কোমল তাকায় ক্যালেন্ডারের রঙিন
তরুণীর দিকে
আমার টেবিলে বসে। কবেকার লাল ঝরাপাতা
চমৎকার উড়ে আসে খাতার পাতায়,
মিশে যায় যুবতীর ডাগর স্তনের
কিশমিশ, বেলা-পড়ে আসা সান্দ্র প্রহরে আহত
টিয়ের পালক আর আস্তিনের ঘ্রাণসহ নেভীব্লু কালিতে।

সোফার অতীতে হাই তোলে, বর্তমান জ্বলে
উৎসবের মতো, যেন বিবাহ বাসরে
দু’জন রমণে লিপ্ত, অজস্র নক্ষত্র স্পন্দমান
যুগল সত্তাকে ঘিরে। যখন রাত্রির কিশোরীর
মতো বয়সিনী,
তখনই রাত্রিকে খুব ঘনিষ্ঠ পাওয়ার জন্যে ওরা
তীব্র গুঞ্জরণময় শহরের হট্ররোল থেকে কিছু দূরে
দাঁড়ায় শহরে মাঠে বহুদিন পর। গোধূলিতে
কেবলি গুমরে ওঠে, টেলিফোনে বিদায়ের গহন বেহাগ-
আবার এয়ারপোর্ট, প্লেনের গর্জন, ফিরে-আসা, চলে-যাওয়া
সময়কে বুনে চলে স্বপ্নের রীতিতে।

অশেষ অভ্রের স্তরে স্তরে মাইল স্টোনের মতো
কী এক রহস্যময় সংকেত প্রোথিত, বিরানায় যোজন-যোজনব্যাপী
ফণিমনসায়
কবিতার ত্রিকালজ্ঞ চোখ জেগে থাকে।

একথা সবাই জানে, মানে না সে টাইম টেবল;
যখন যেখানে খুশি হরিণের মতো লাফ দেয়,
চিতার চোখের মতো ধক জ্বলে,
উচ্ছুসিত হয়ে ওঠে ফোয়ারার মতো। মধ্যরাতে
আশি দশকের পদ্যাবলী কী ব্যাকুল
ডেকে ওঠে ফুটপাতে, ধাবমান শেষ বাসে আর
অন্ধকার ফ্ল্যাটের ভেতরে বারংবার।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 170

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts