Poem

নন্দলাল বসুর সঙ্গে কিছুক্ষণ

শামসুর রাহমান

খুব ভোরবেলা ঘুম ভাঙে অদৃশ্য পাখির গানে,
সে সুর ছড়িয়ে পড়ে ময়ূর রঙের আসমানে।
দূরে নন্দলাল বসুর ছবির মতো
দিগ্বলয় চোখে পড়ে; আমি অভ্যাগত
বত্রিশ বছর আগে যাচ্ছিলাম হেঁটে তাকে নিয়ে
রতন কুঠির পাশ দিয়ে,
অকারণ কত কিছু সযত্নে কুড়িয়ে চলে মন,
অমর্ত্য পাখির মতো গান গায় শান্তিনিকেতন।

খালি পায়ে পথ হাঁটি সকাল ন’টায়, মাটি-ঘাসে
মমতার স্পর্শ পাই, নন্দলাল বসুর নিবাসে
অত্যন্ত স্পন্দিত প্রাণে যাই,
শিল্পীর নিবাস যেন সাধকের ধ্যান, মেলে ঠাঁই
সকলের; জগত সংসার লগ্ন চৌহদ্দিতে। হেসে
তাকালেন, সময়-পেরুনো দৃষ্টি; সাদাসিধে বেশে
আছেন নিমগ্ন ব’সে সুজনি-শোভিত তক্তাপোশে। বসে পড়ি
আমরা ক’জন তাঁকে ঘিরে, দিলেন ভাসিয়ে তিনি শিল্পতরী।

সেই ঘর ভরা
আনন্দের স্বরে, দেখি তাঁর হাতে পোষা পাখির ধরনে ধরা
নিজস্ব প্রিন্টের অ্যালবাম। একটি একটি করে
ছবি মেলে ধরলেন তিনি, দৃষ্টির দুকূল ভরে
আমাদের কেমন সৌন্দর্য এলো-অমরাবতীতে
একটি ছাগল চরে, অজয় নদীতে
পা ডোবায় সাঁওতাল তরুণী; হঠাৎ
অ্যালবাম বন্ধ করে করলেন তিনি ঘরছাড়া দৃষ্টিপাত।

‘আজ এখানেই শেষ, আবার কখনো যদি ফিরে
আসো কোনো দিন অজয় নদীর তীরে,
ছাতিম তলায়, তবে বাকি
ছবি দেখা যাবে ফের একসঙ্গে আরেক সকালে’। দূরে পাখি
ডেকে ওঠে, উৎসব ফুরাল লহমায়,
পান করে পদ্মবন, পলাশ ও শিমুলের মেলা,
গোপাল ক্ষ্যাপার নাচ পথ চলি, গাছের মধ্যেই দেখি শিব, বাড়ে বেলা।

এ কেমন খেলা দেখালেন শিল্পচার্য? কিছু অন্তরালে রেখে,
নান্দনিক উন্মোচনে মেতে কিছু এঁকে
ফোটান ত্রিলোক তিনি; তবুও পায় না সম্পূর্ণতা
শিল্প চরাচরে; নদী, পাখি, তরুলতা,
বারবার ফিরে আসে রঙ রেখায়। আর কত
বছর কী দ্রুত কেটে গেল, নিজের ছবিরই মতো
এই তো আছেন ব’সে নন্দলাল নন্দন সিঁড়ি জুড়ে। চলো যাই,
কাছে ডাকে রোদের ঝালর প’রে ক্ষীণাঙ্গী খোয়াই।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 133

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts