Poem

ট্রেনের জানালা থেকে

শামসুর রাহমান

সতেজ সকালবেলা সবুজ আড়ালে
ডুরে-শাড়ি-পরা
যৌবন দাঁড়িয়ে ছিল একাকিনী, খুব দ্রুতগামী
ট্রেনের জানালা থেকে দেখলাম। তার
গোড়ালির গন্ধ শুঁকে
একটি গুবরে পোকা ঢুকে পড়ে ঘাসের ভিতরে।
অকস্মাৎ ধবধবে বক উড়ে যায়
দাবার ছকের মতো ক্ষেতের ওপর দিয়ে, আসমানী প্রসাধন চলে
জলের আরশিতে। শূন্য নৌকা
ডাঙায় কুঁড়েমি করে, কী যেন কুড়ায় পথে বিশীর্ণ বালক।

পিত্রালয়ে ফিরোল্টা যাবার আশা পলাশের আভা
ছড়িয়ে তার চোখে, নাকি
প্রবাসী স্বামীর প্রত্যাবর্তনের পথ-চেয়ে-থাকা
ফোটায় অজস্র তারা রক্তকণিকায়,
নাকি ওর হৃদয়ের গহন দুপুরে
মোহন চক্কর দিতে দিতে ডেকে যায় শঙ্খচিল।

হয়তো কেউ তাকে ডেকে নিয়ে গেছে নিকানো উঠোনে,
ধান ভানা বাকি আছে, আছে
ইঁদারার কাছে যাওয়া, বাসী কিছু বাসন-কোসন
মেজে ঘষে ধুয়ে মুছে
সাজিয়ে রাখতে হবে। শিকায় ঝোলানো
খয়েরি বৈয়ম থেকে গুড
এখুনি নামিয়ে দিতে হবে, গাছ-পাকা
পেঁপে কেটে দিতে হবে
অতিথির পাতে, সে এখন মিশে যাবে সংসারের
শত কাজে, যেমন দিঘির সুনসান
পানিতে সহজে ভেসে যায়
মাটির কলস।

ভোরবেলাকার ট্রেন হুইসল্‌ বাজাতে বাজাতে
ছুটে যাচ্ছে, গাছগাছালির আড়ালবর্তিনী ডুরে-শাড়ি-পরা
যৌবন দাঁড়িয়ে আছে আমার ভিতরে।
কী-যে তার নাম,
বিবাহিতা অথবা অনূঢ়া,
নাকি উপস্থিত রজস্বলা নাকি সদ্য গর্ভধারিণী, এসব
কিছুই না জেনে দ্রুত চলেছি একাকী
শহুরে মানুষ। একদিন
সবুজ আড়ালে-থাকা ডুরে-শাড়ি-পরা
যৌবন নিশ্চিত মুছে যাবে,
যেন জলরঙ; আপাতত আমি খুব চুপচাপ
ট্রেনের জানালা থেকে লঙ শটে দেখে নিচ্ছি জলমগ্ন মাঠ,
নিবিড় লাঙল-ঠেলা কৃষকের রোদ্দুরে-পিছলে-পড়া পিঠ,
আনন্দ-বলয় থেকে আসা পাখি, তারে-বসা, শুদ্ধচারী মেঘ
এবং ভাবছি তাকে, বানাচ্ছি প্রতিমা তার স্মৃতির ভিতরে,
নাম ধাম যার
সর্বদা থাকবে ঢাকা বেজায় বেগানা কুয়াশায়।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 692

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts