Poem

বহুদিন পর মাকে

শামসুর রাহমান

সুরমা রঙের মেঘে রোদ্দুরের পাড়, চরাচরে
চকিতে ছড়িয়ে পড়ে সুর,
হৃদয়ের ভোরবেলাকেই ভরে তোলে, পিছুডাক;
আসমানে চিলের পাখার ঝলসানি।

বারান্দার জায়ানামাজের মখমলে প্রজাপতি,
এককোণে তসবি ধ্যানস্থ,
হঠাৎ কী ভেবে তিনি ঘরের ভেতর
গেলেন আমার আম্মা। চৌকাঠে লুটায়
রোদ্দুর, শিশুর হাসি। বহুদিন পর
মাকে দেখলাম তাঁর
আলমারি গোছাতে, একটা ঘ্রাণ, পুরানো দিনের,
সারা ঘরে গুণীর তানের মতো ব্যাকুল ছড়ানো।

আমি অগোচরে;
নানা কাপড়ের ভাঁজে কী যেন তন্ময়
খুঁজছেন; ঘরে ওড়ে প্রজাপতি। ফটোগ্রাফ থেকে
আমার পিতার চক্ষুদ্বয়
চেয়ে থাকে, যেনবা আবৃত্তি করে জন্মদিন। কারুকাজময়
আলমারি থেকে
একটি গোলাপি বানারসী শাড়ি হাতে
নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখলেন কিছুক্ষণ,
তাকিয়ে লাজুক চোখে এদিক ওদিক
জড়ালেন গায়ে।

অকস্মাৎ রঙধনু, তাঁর সমগ্র সত্তায়, যেন
তিনি পুনরায় নববধূ অতীতের
চন্দ্রিল বাসর ঘরে। বৈধব্যের গোধূলিতে একটি গোলাপি
বানারসী শাড়ি হাতে
দাঁড়ানো আমার আম্মা। চোখে
তাঁর বাইফোকাল চশমা,
এবং স্খলিত দাঁত, সময়ের নখের আঁচড়ে

উৎকীর্ণ অস্তিত্বময়, যেন কবিতা লিখতে গিয়ে
কিছু হিজিবিজি এঁকে ফেলেছি খাতায়। আজ এই
সত্তরেও দেখি
যৌবন আনত তাঁর কাছে।
‘এর আগে এমন সুন্দর আমি দেখিনি তোমাকে’,
মনে মনে উচ্চারণ করে অন্তরালে
সৌন্দর্য লুণ্ঠনকারী সরে যাই সে বাসর থেকে।

সুরমা রঙের মেঘে রোদ্দুরের পাড়, কতিপয়
কবুতর রেলিঙ-এ আতিথ্য নেয়, গম
পাবে; মা আমার
দাঁড়ানো দরজা ঘেঁষে, তাঁকে
কী এক উৎসব
ত্যাগ করে গেছে, মনে হয়। আলগোছে
নেবেন কুড়িয়ে তিনি ফিরোজা তসবি
একটু পরেই-
কখন যে মদির গোলাপি বানারসী হয়ে যায়
পশ্চিম আকাশ আর তিনি
আছেন দাঁড়িয়ে
একাকিনী; প্রতীক্ষার কাতর প্রতিমা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 180

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts