Poem

বেদেনীর জন্যে

শামসুর রাহমান

তন্বী বেদেনী বউটি তোমার হারাল কোথায়?
কোথায় উজাড় করলে তোমার ভরা ঝাঁপি?
ফোলা ঠোঁট দেখে উদ্বেগ গ্রীবা বাড়ায় কেবলি,
শত শত ঘোড়া খুর ঠোকে মনে, ভয়ে কাঁপি।

হৃদয়ে আমার গোধূলি বেলায় জ্বেলেছে দেয়ালি
তোমার অমন চোখের দু’ফোটা কালো আলো।
তন্বী বেদেনী এ শহরে তুমি কেন এসেছিলে?
তোমার সংগে দেখা না হলেই ছিল ভালো।

মনে পড়ে আজ তোমার শরীর থেকে উঠে আসা
নদীর এবং গাছগাছালির বুনো ঘ্রাণ;
অঙ্গ তোমার কালো বিদ্যুৎ, প্রতিটি ঝলকে
চমকে উঠছে খুব সহর্য এই প্রাণ।

তোমার বুকের বাটিতে কটির মালায় এবং
নাভির কোটরে বসন্ত রাগ কী নিবিড়।
খোঁপার কৃষ্ণ মধুকোষ থেকে ঝরে মধু, তুমি
সে-মধু মিশিয়ে ছুড়েছ আমার দিকে তীর।

তোমার পাছাটা, কুমোরের গড়া পুরুষ্ট ঘড়া,
ভাসে জ্যোৎস্নায়, যখন এ-পথে যাও হেঁটে।
আকাশের নীড় ছেড়ে জ্বলজ্বলে অজস্র তারা
চুমো খেয়ে যায় তোমার উদোম তলপেটে।
আমার দৃষ্টি তোমার আতশী সত্তার তটে
শামুকের মতো চলে অবিরাম ঢিমে তালে।
নির্যৌবন আমি বড় একা, ভরা যৌবন
তোমার বেদেনী, যেনবা লেগেছে হাওয়া পালে।

নীল আয়নায় বিকীর্ণ শোভা, ভেসে ওঠে মুখ
তোমার আমার। ইঙ্গিতে ডেকে নিয়ে গেলে
গোলাপ বাগানে; চুম্বনে ছিল পাখিদের গান,
হৃদয়ের তাপ সেখানে এসেছি কিছু ফেলে।

চকচকে, চুল, ঠোঁটে ছিল স্বাদু পানের সোহাগ,
কথায় কথায় দুলছিলে, তুমি গোধূলিতে,
যেন তরঙ্গে চিকন নৌকা। আমার সমুখে
ধরেছিলে মেলে রঙিন রুমাল ঘ্রাণ নিতে।

সে রুমালে ছিল অদ্ভুত এক নকশা কেমন;
মনে হয় বুঝি, অথচ যায় না কিছু বোঝা।
হাজার সূর্য ডুবে যাবে শুধু অর্থ খুঁজতে,
খুঁজেছি অনেক এবং চলছে আজও খোঁজা।

রুমালের রঙে মিশেছিল রঙ কিছুটা যেনবা
গোলাপের মতো আর জহরের মতো কালো;
তোমার মদির আশ্লেষে আছে মৃত্যুর ফণা,
তোমার সঙ্গে দেখা না হলেই ছিল ভালো।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 140

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts