Poem

নির্বাসনের পরে

শামসুর রাহমান

এখন আমি অসুস্থ কুকুর যেন, নিস্তেজ, ঝিমোনা,
অথচ ঘুম নেই। মশা, মাছি, পিঁপড়ে, গুবরে পোকা
সারাক্ষণ বিরক্ত করছে, সহ্য করি ওদের উৎপীড়ন মুখ বুজে,
ওগুলোকে তাড়াবার ইচ্ছে পর্যন্ত হয় না,
এমনই নিরুদ্যম আমি। কখনও
তন্দ্রাচ্ছন্নতায় দেখি, এক ঝাঁক দাঁড়কাক আমার
শরীরকে ভীষণ ঠুকরে ঠুকরে
শতচ্ছিন্ন ন্যাকড়া বানাচ্ছে, ছোরাসদৃশ
চঞ্চু দিয়ে উপড়ে ফেলছে হৃৎপিণ্ড। খুব কাছে থেকে
এই দৃশ্যে মজা লুটছে
ক’জন জাঁহাবাজ মাস্তান আর জুতোর ডগায়
নাচাচ্ছে কয়েকটি করোটি, মুখে ক্রূর হাসি।

হায়, কী সেই সময়! কোকিলের গান ছাড়াই
গুণীর বাদ্যযন্ত্রের মতো ঝংকৃত হতো
মুহূর্তগুলো; কোথাও কোনও ফুল নেই, অথচ
আমার চুতুর্দিক সুরভিত সারাক্ষণ। না ডাকলেও কোত্থেকে
চলে আসত কয়েকটি রাজহাঁস। তখন
তোমার কথার পাপড়ি আর হাসির ঝর্ণাতলায়
নিত্য নিয়েছি বিশ্রাম। তোমাকে
একটু দাঁড়াতে কিংবা বসে থাকতে দেখলে মনে হতো
বসন্ত আমার সত্তায় ছড়িয়ে দিয়েছে সজীবতা হঠাৎ
হাভাতে জ্যোৎস্নাখেকো মেঘ গিলে ফেলে পূর্ণিমাকে।

তারপর থেকে এই নির্বাসিত আমি-র স্বস্তি নেই, শান্তি নেই;
কাটে নির্ঘুম রাত। অনুশোচনার ক্রুশকাঠে বিদ্ধ
আমি যন্ত্রণার অন্তহীন সেতু পেরোতে গিয়ে
হোঁচট খাই বারবার। চোখের পাতা বুজে আসে,
কিন্তু আমি কি ঘুমাতে পারি
তোমার অপ্রসন্নতার কণ্টকময় তিমিরে?

আবার অলৌকিক তরঙ্গ স্পর্শ করে আমাকে;
নির্বাসনের পরে তোমার উদার প্রসন্নতা তারার ঝর্ণা হয়ে
ঝরে আমার ওপর এবং
মনোজ আনন্দ নিকেতনে কবির বসবাস।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 128

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts