Poem

ডাঃ জেকিল অ্যান্ড মিঃ হাইড

শামসুর রাহমান

ছিলাম তো শাদামাঠা, আলাভোলা শহুরে বাসিন্দা
একজন; কারও সাথে পাঁচে
ছিল না আমার মন কোনওদিন, গৃহকোণে জ্ঞানান্বেষী সাধকের মতো
সুন্দর ও কল্যাণের ধ্যানে মগ্ন ছিলাম সর্বদা। শক্র মিত্র
যাচাইয়ের ক্ষমতায় দিইনি অধিক ধার আর
করেছি বিশ্বাস সবাইকে খোলা মনে। ভেবেছি রোদ্দুরে আর
জ্যোৎস্নায় সাঁতার কেটে যাবে বেলা,
ফুটবে না কাঁটা পায়ে রুক্ষ পথ যখন তখন।
একদিন কী-যে হ’ল দেহমনে, চেয়ে দেখি এ কি
আমার ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে ভেজা
লকলকে জিভ আর মুহূর্তেই আমি কান্তিমান,
সুঠাম দেহের অধিকারী, গভীর নিশীথে বসি
জুয়োর টেবিলে নিত্য দেবদূতদের
সঙ্গে, খরদৃষ্টিতে পোড়াই
প্রতিযোগীদের আর রমণীলোলুপ আমি প্রকৃত প্রেমের
সন্ধান পেয়েও নষ্ট মেয়েমানুষের
সঙ্গে মাতি ক্ষণিকের কপট প্রণয়ে! একজন
বামন আমার দিকে ছুঁড়ে দে কুটিল তামাশা।

আয়নায় নিজেকে দেখে চম্‌কে উঠি-এ কোন সুকান্ত
পশু, যাকে বস্তুত চিনি না, যে আমার সত্তা ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেই করে
হাতাহাতি কঠিন আঘাতে আর্ত কেউ,
কারও কষ বেয়ে রক্ত ঝরে
এবং নিজেও আমি শরীরে প্রচুর ক্ষত নিয়ে
উদ্‌ভ্রান্ত ডেরায় ফিরি। রাত্রিশেষে আমার প্রকৃত
আমি হয়ে যেতে থাকি, যখন সূর্যের
প্রথম কিরণ চুমো খায় আমাকে নতুন ভেবে।

সন্ধ্যা নেমে এলেই চকিতে অন্য কেউ, যার বুকের ভেতর
নিমেষে গজায় লোমরাশি, আমাকে দখল করে,
দস্তানায় লুকিয়ে সুতীক্ষ্ম নোখ কাফে
কিংবা বারে যাই, গোল বাধে যথারীতি, ঘরে ফিরি
ঝড়োবেগে, বুকজোড়া হা-হুতাশ, আমার তৃষ্ণার্ত ওষ্ঠে ঝরে
দু’ফোটা শিশির, কী ব্যাকুল চেটে নিই।

প্রত্যুষ ফিরিয়ে দেয় পুরনো চেহারা শাদামাঠা, আলাভোলা,
সারল্যে কোমল, টলটলে; কৃতকর্মে অনুতাপে
দুগ্ধ হই বারবার। স্থাপিত আমার নত কাঁধে
সুন্দর ও কল্যাণের হাত। ‘বিনাশে তোমার ত্রাণ’,
দশদিকে থেকে ডেকে বলে ঘন ঘন
রোদের ঝিলিক-লাগা নগ্ন কবরের ঘাসমাটি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 118

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts