Poem

তার জন্মদিনটির ললাটে প্রথম আলো চুমো এঁকে দিলে
এক পক্ষ বলে-
বহু ভোরবেলাকার, দুপুরের, গোধূলির রঙ মেখে সত্তায়
আখেরে
সত্তর বছরে পা রাখল এই অসুস্থ লোকটা।
জ্বালিয়েছে ঢের এতকাল,
জানি না জ্বালাবে আর কতদিন, কতকাল প্রত্যহ পুড়িয়ে
করবে কয়লা, খাক হাড় আমাদের। লিখেছে বেহুদা পদ্য
রাশি রাশি, বাজিয়েছে বাঁশি, বলে লোকে,
বেলা অবেলায়-বৃদ্ধ, প্রৌঢ়, তরুণ, তরুণী
পিছনে ঘুরেছে তার, ডুবেছে ভ্রান্তির প্রতারক জলাশয়ে।

লোকটা প্রথার তাজ ধুলোয় লুটিয়ে দেয়, করে
পদাঘাত অচলায়তনে; গোঁয়ার মুঠোয় নিয়ে
নেতির চুলের মুঠি ছুঁড়ে ফেলে দূরের ভাগাড়ে। প্রশ্নহীন
আমরা যে-পথে চলি, সে-পথে পড়ে না ওর কোনও পদছাপ
কোনওদিন, ভাষা তার উদ্ভট, গলিজ।
আফিম সেবনে খুব নেশা ক্লান্ত, নিদ্রাতুর মহফিলে আগুনের ফুল
ছিটিয়ে করেছে দিশেহারা আমাদের
যখন তখন। অবিলম্বে এইবুড়ো আপদের বিলুপ্তি আমরা
চাই।

হাতে মালা নিয়ে অন্য পক্ষ বলে আনন্দিত স্বরে-
সপ্রাণ থাকুন তিনি বহুকাল আমাদের আনন্দ-উৎসবে,
প্রত্যহ উঠুক বেজে তাঁর বাঁশি, উদ্ভাসিত হোক
চতুর্দিক অনিন্দ্য সুরের পূর্ণিমায়। আমরা পেয়েছি তাঁকে
আমাদের দুঃখের নিশীথে আর শোকের আন্ধারে
বারবার পাশে,
উৎফুল্ল ছিলেন তিনি আমাদের আদিগন্ত জয়োল্লাসে। ভাষা
তাঁর জীবনের স্পন্দনের ভাষা, আমাদের
হৃদয়ের ধ্বনি আর চেতনাপ্রবাহে তাঁর সেকাল একাল
ভাবীকাল বয়ে যায়। পড়ুক শক্রর মুখে ছাই,
চাই তিনি সত্তর পেরিয়ে বহুদূর হেঁটে যান
অমিত তারুণ্যে দীপ্ত। পলাশ, কনকচাঁপা, ঘাসফুল, পাতাবাহারের
শোভা, মাঠ, দিঘি, নদী, নক্ষত্র, জোনাকি,
অগণিত সূর্যোদয় তাঁকে নিত্য স্বাগত জানাক।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 117

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts