Poem

কবি লিখে যান জয়গাথা

শামসুর রাহমান

মুদ্রিত তথ্যানুযায়ী জানি লোকটার জীবনের
প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মিশেছে ধূসর গোধূলিতে। ছিল না সে
কারও সাতেপাঁচে, লাঠি দিয়ে
মারেনি মাথায় বাড়ি কোনও মানবের
অথবা কখনও তাক করেনি বন্দুক
কারও বুক লক্ষ করে, এমনকি পাখিরও জীবন
করেনি হরণ কোনওকালে। যতদূর জানি,
আজ অব্দি প্রাণীহত্যা স্বচক্ষে দেখেনি, বরং সে
রেখেছে দু’হাতে মুখ ঢেকে,
যখন বাড়ির কাছে পশুর গলায় ছুরি চালানো হয়েছে।

বস্তুত লোকটা তার জীবন কাটালো বই পড়ে,
এবং কবিতা লিখে। অসুস্থতা বাগে পেয়ে তাকে ইদানীং
এদিক সেদিক থেকে নিচ্ছে প্রতিশোধ দীর্ঘকাল
নিয়মভঙ্গের শাস্তিস্বরূপ; লোকটা কিছুতেই
একরত্তি শান্তি কিংবা স্বস্তি আজ পাচ্ছে না নিজের ঘরে বসে
অথবা বাইরে ঘুরে বেড়িয়ে খানিক। বাড়ি আর
খোলা পথ দুটোই বিপদাচ্ছন্ন হন্তারকের সহিংস
নিঃশ্বাসে, অস্ত্রের স্বৈরাচারে। হায়, এই তো জীবন লোকটার!

লোকটা প্রায়শ পৌরাণিক সাগরের
জলে জাল ফেলে তুলে আনে আশ্চর্য রঙিন কিছু মাছ,
খাতার পাতায় লেখে পীড়িত চোখের তীব্র বাধা সত্ত্বেও মনের
মুক্তির মুক্তোর দীপ্তি, প্রেম, কল্যাণ ও প্রগতির কথা।
তবু তার প্রাণনাশে লিপ্ত কতিপয় সভ্যতা-বিদ্বেষী লোক হানা দেয়,
ঘরে তার হানা দেয় মারণাস্ত্র নিয়ে।

চকচকে কুঠারের আঘাত দৈবাৎ ফস্কে যায়,
প্রাণরক্ষা পায় লোকটার। ভয়ঙ্কর এ ঘটনা
মুশকরার খোরাক হয়েছে কোনও পশ্চাৎপদ অধ্যাপক
এবং সম্প্রতি গোঁফ-গজানো ক’জন
মিহি পদ্যবাজ আর সত্তাময় শ্যাওলা-জড়ানো লোকদের। তবু কবি
অবিচল; নতুন যুগের সূর্যোদয়ে লিখে যায় জয়গাথা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 127

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts