Poem

ধোঁয়াশার ভেতর যেতে যেতে

শামসুর রাহমান

ধোঁয়াশার ভেতর যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে হাতে ছুঁয়ে ঠাওর
করতে পারিনি দরজাটা কাঠের, লোহার না পাথরের। স্পর্শ
বিলক্ষণ বুঝিয়ে দিলো দরজা খুব শক্ত কোনও পদার্থ দিয়ে তৈরি।
ভেতরে প্রবেশ করা তেমন সহজ হবে না। কোনওরকম ফাঁক-ফোকর
নেই, ওপর-চালাকিও নিষ্ফল। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও ভেতরে
প্রবেশাধিকার মিলবে কিনা, বলা মুশকিল। কড়া নেই যে খুব জোরে
নাড়বো। চেঁচিয়ে মরলেও কেউ শুনবে না। এখানে ধাক্কাধাক্কি
করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। অপেক্ষা, শুধু অপেক্ষা করা
ছাড়া গত্যন্তর নেই।

অনেক প্রহর নিশ্চুপ কাটাবার পর চেয়ে দেখি, দরজাটা দরাজ
দিলে খোলা, ওর অস্তিত্বে আমন্ত্রণের ভাষা। প্রবেশ করতেই
আমাকে চুম্বন করে নানা ভাষার বর্ণপরিচয়ের আদ্যাক্ষর।
আমাকে দেখে ‘অ’-র কী আনন্দ, কী নাচানাচি চারদিকে, ওর কণ্ঠে
বসন্তবাহারের তার। আমিও আমার আত্মার আত্মীয়কে দেখে
ফুটতে থাকি ফুলের মতো। হঠাৎ সেখানে হাজির হয় পশুরাজ
সিংহ, তাকায় আমার দিকে, চক্রাকারে ঘুরে আমার ধূলিধূসর
বিনীত পোশাক শুঁকে কোথায় চলে যায়।

সামনের দিকে আমার এগিয়ে চলা। আমাকে ঘিরে ধরেছে
মেঘদল, মেঘমল্লারের সুর। মেঘদল কী এক গভীর বোধ আমার
মনে জাগিয়ে তোলে। ভাসমান মেঘের পেছনে পেছনে হাঁটি আর
কিয়দ্দূরে পৌঁছে দেখি কী প্রচণ্ড ভিড়। পাঁচমিশেলী কণ্ঠস্বরে সেই
পুষ্পিত বাগান গমগম করছে। হঠাৎ এক আশ্চর্য নীরবতা। বাক্যহারা
সব ধীমান, পণ্ডিত, পদ্যকার। আমি জড়োসড়ো দাঁড়িয়ে থাকি দূরে
এক কোণে। আশ্চর্য সেই উদ্যানে এক নারীর আবির্ভাব। তিনি আমাদের
চেনা এবং অচেনা। তার হাতে অনিন্দ্যসুন্দর এক বীণা, পায়ের কাছে
তুষারশুভ্র হাঁস। অপরূপ সুন্দরী সেই নারীর মুখে দেবী সরস্বতীর
আদল। ধীমান, জবরদস্ত বিদ্বান এবং পণ্ডিতদের অতিক্রম করে তিনি
এগিয়ে এলেন দীনবেশে দাঁড়ানো, বেজায় সঙ্কুচিত আমারই কাছে। মৃদু
হেসে আমাকে তাঁর হাঁসের একটি পালক দান করলেন। আমি বিস্ময়
এবং আনন্দের মাত্রাবৃত্তের মতো স্পন্দিত।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 101

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts