Poem

অথচ আনন্দগীতি

শামসুর রাহমান

যে পাখি দেহের খাঁচায় নাচে, কখনও সখনও ঝিমায়,
প্রায়শ গান গায়, সে যে অচিন বড়, বেজায় খামখেয়ালী।
তার দিকে কেউ কেউ ঢিল ছুঁড়ে আমোদে গড়াগড়ি যায়,
কেউ কেউ তাকে লক্ষ করে কুড়ালের আঘাত হানে। অনেকেই
মশ্‌করা ভেবে তুড়ি মেরে সব উড়িয়ে দেয়। দেহঘড়ি কখন
তার ক্ষীণ আওয়াজ বন্ধ করে দেয়, এই দুর্ভাবনা লোকটাকে
বিষণ্ন করে। অথচ তাকে হাঁটতে হবে অনেকটা পথ, এখনই
থামলে খাতাটা বেজায় শূন্য থেকে যাবে। যেসব শব্দ বুক চিরে
বেরিয়ে আসার জন্যে ব্যাকুল, দিশেহারা ওদের আমি কীভাবে
আশ্বস্ত করবো? নিজেকে বড়ই বোকা-সোকা লাগে এবং
এক ধরনের অক্ষম প্রবোধ দেয়ার চেষ্টায় মেতে উঠি এই
ভঙ্গুর দেহ-খাঁচাটিকে আর না-লেখা কবিতাবলিকে। দুঃখের
মেঘগুলোকে সরিয়ে আমার মনের ভেতরকার নানা পথে
বিপথে আমার ঘুরাঘুরি, আতশবাজি পোড়ানো, আন্ধারে
প্রদীপ জ্বালানো। প্রিয়জনদের ছেড়ে যেতে ভারী কষ্ট হয়
দেহখাঁচার পাখিটার। কান্না পায়, অথচ গাইতে হয় আনন্দগীতি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 126

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts