Poem

ছেলেবেলা হেসে খেলে কেটে গেছে, কৈশোরে হেঁটেছি
নিষ্কণ্টক, পাথরবিহীন পথে এবং যৌবনে
পথ চলাতেই ছিল রাঙা পলাশের
জয়োল্লাস, পূর্ণিমার শান্ত মাদকতা আর অনিন্দ্য সঙ্গীত
হৃদয়ের। অথচ যৌবনোত্তর কালে
আকাশ আচ্ছন্ন হলো কালো মেঘে, ঝড়ক্ষুব্ধ কত
দিনরাত কাটলো উদ্বেগে, বারবার
জানা ও অজানা না শঙ্কায় উঠেছি কেঁপে নিজেরই ভিটায়।

বিস্তর বয়স হলো, শরীরের কাঠামো বড়ই
নড়বড়ে, রকমারি অসুখের চোরাগোপ্তা মারে প্রায়শই
হচ্ছি কাবু। কী-যে হলো, আজকাল রজ্জু দেখলেই
বিষধর সর্প বলে ভ্রম হয়, আঁতকে উঠে ক’হাত পেছনে
হটে যাই, ঘিরে ধরে দুঃস্বপ্নের জাল অষ্পষ্ট নিদ্রার কালে।
কত প্রতারণা আর কত যে জোচ্চুরি, খুব ঠাণ্ডা
মাথায় দিনদুপুরে সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ বস্তুত মনুষ্যরূপী
পশুদের বর্ধমান। অসহায় মানবের আর্তনাদে মেঘ,
নক্ষত্রের বুক দীর্ণ হয় হামেশাই। কত মুখ
অবলীলাক্রমে হলো বিকট মুখোশ কারও গোপন সংকেতে।

কোজাগরী পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাধারা পারে না ঘোচাতে
ঘাতকের রক্তপায়ী ছোরার খুনের ছাপ, ব্যর্থ অপরাধী
রিভলবারের কালি মোছাতে সর্বদা। ইদানীং
শুভ আত্মাহুতি দেয় অশুভের পঙ্কিল ডোবায়।

কুচক্রী ছায়ার নিচে দিন কাটে, রাত
অনিদ্রার কাঁটায় নিয়ত বিদ্ধ কম্পিত হৃদয়ে শুনি
একটি আবছা ডাক। আজকাল সেই ডাক আমার শরীর
ছুঁয়ে যায় ক্ষণে ক্ষণে, একদা যা ছিল
অস্তিত্ববিহীন প্রায়। এখন তো নিজ গৃহকোণে
লেখার টেবিলে ঝুঁকে বই পড়া কিংবা কবিতার পঙ্‌ক্তিমালা
রচনার ধ্যানকালে অথবা যখন প্রিয় বন্ধুমণ্ডলীর
গুলজার আড্ডায় বেজায় মশগুল কিংবা চেনা শ্যামলীর
ওভারব্রিজের ভিড়ে হেঁটে যাই, কবি-সম্মেলনে এক কোণে
চুপাচুপ বসে থাকি, সে-ডাক আমাকে আচমকা
ভীষণ চমকে দেয়। এ-ও জানি, একদিন এই ডাক এমন অমোঘ,
দুর্নিবার হবে, গাঢ় অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হবো আত্মসমর্পণে!

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 210

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts