Poem

ফেরার উপায় নেই

শামসুর রাহমান

আহারে ছিল না রুচি, উপরন্তু অনিদ্রা আমাকে ঘষটাতে
ঘষটাতে বৃক্ষতলে ফেলে দেয়। এমন অচেনা পরিবেশে
এলেই চৌদিক থেকে কিছু ধ্বনি প্রতিধ্বনি নিস্তব্ধতা ছিঁড়ে
আমাকে ঝাঁকুনি দেয়। বার বার অস্তিত্বের ভিড় কেঁপে ওঠে।

পরিবেশ পাল্টে যায়, আমার কম্পিত অস্তিত্বের অন্তর্গত
অন্য একজন আচমকা ঝোড়ো ভঙ্গিমায় এসে
ছোট ঘরটায় বসে আমার সম্মুখে। অবয়ব তার খুব
অস্পষ্ট; কখনও চেনা, কখনও বা কেমন অচেনা মনে হয়।
বাস্তবিক! তাকে কোন্‌ নামের ব্র্যাকেটে সম্বোধন
করবো, স্বাগত জানাবার ভঙ্গিমায়
আন্তরিক গড়বো হাতের মুদ্রা, ভেবেই পাইনি। সে চকিতে
চেয়ারে নিবিড় বসে টেনে নেয় খাতা, যার কতিপয় পাতা
সযত্নে সাজানো কবিতায়। আধোচেনা লোকটার
হাতের কলম লহমায় বেজায় চঞ্চল হয়, সাদা পাতা
ক্রমান্বয়ে প্রফুল্ল ধারণ করে পঙ্‌ক্তিমালা। এমনই ধরন
লোকটার, যেন আমি নেই এই ঘরের কোথাও।

পরিচিতি হস্তাক্ষরময় পাতা টেবিলের এক কোণে রেখে
চেয়ার ছেড়ে সে চুপচাপ ঠাঁই নেয় পুনরায়
অন্তরে আমার। অকস্মাৎ দু’চোখে আপনকার ছোট ঘর
অনন্য নক্ষত্র পল্লীরূপে প্রতিভাত হয়। অচেনা রূপসী
একজন, সমস্ত শরীর যার জলবিনুময়,
চোখে জ্বলজ্বলে অমরতা, বলেন আমাকে অতি নৈর্ব্যক্তিক
কণ্ঠস্বরে, ‘ব্যর্থতার ধুধু মাঠ কখনও কাউকে
হতাশার ধুলো ছাড়া দেয় না কিছুই। অগণিত কঙ্কালেরা
অট্রহাসি ছুঁড়ে করুণ কান্নার রোল শোনায়, শিরায়
রক্তধারা হিম হয়ে আসে। ফিরে যাও, ফিরে যাও।

আমাকে বিপন্ন করে রূপসীর কণ্ঠস্বর অজানা কোথাও
ডুবে যায়। সরোবরে? সমুদ্দুরে? অথচ আমার
ফেরার উপায় নেই; আশা কিংবা নিরাশায় সেই একই পক্ষে
যেতে হবে চেতনা সজাগ রেখে কায়ক্লেশ সয়ে দিনরাত।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 127

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts