Poem

দিগন্তের অন্তরালে

শামসুর রাহমান

বড় ম্লান বেশ দেখে আমার মুকুন্দরাম হেসে
বললেন, ‘শোনো হে, নাও এই ফতুয়া আমার’ এই
দান সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে পথ চলি ফের সূর্যাস্তের
দিকে মুখ রেখে; অদূরেই ছিলেন অপেক্ষমাণ উৎফুল্ল ভারতচন্দ্র,
এগিয়ে দিলেন যিনি উত্তরীয় তাঁর
দীন পথিকের হাতে। আমি করজোড়ে করি নিবেদন-
আমি এ দানের যোগ্য নই, কবি। দাতা গুটিয়ে নিলেন হাত।
রৌদ্রের চুম্বনে পথ লাজরাঙা হয়।

খানিক পরেই দেখি, পদ্মপুকুরের ধারে সুললিত সুরে
তন্ময় আউড়ে চলেছেন পদাবলি বিদ্যাপতি। হতদরিদ্র আমাকে
দেখে ধ্যান ভেঙে গেলে, তিনি গলার মুক্তোর হার
আমাকে করেন দান অকাতরে। একান্ত কৃতার্থ আমি বলি,
এ হার আমার কণ্ঠে কখনও পাবে না শোভা কবি,
এ দান ফিরিয়ে নিন, বলে পুনরায় যাত্রা করি
সূর্যাস্তের দিকে মুখ রেখে। তাড়াতাড়ি
উড়িয়ে প্রচুর ধুলো দিগন্তের দিকে অগ্রসর হতে থাকি।

তবে কি সাগরদাঁড়ি আমার দৃষ্টিতে
‘স্বাগতম’ পোস্টার এঁকে দিয়েছে চকিতে? চোখে পড়ে
কপোতাক্ষ তীরে মাইকেল প্রগাঢ় অমিত্রাক্ষর ছন্দে
স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করছেন, হাতে তাঁর মদিরার
রঙিন পেয়ালা আর আমাকে দেখেই আমন্ত্রণ
জানালেন, ‘ওকে ফেলো, সতত যে সুরা পান করি,
তার কিছু করবে কি টেস্ট? হ্যাভ সাম, দিচ্ছি আমার ফরার্সি স্কার্ফ,
হ্যাভ দিস্‌ স্মল গিফ্‌ট। নো, থ্যাঙ্কস স্যার, আপনার
সঙ্গে হ্যান্ডসেক করলেই ধন্য হবো বলে নিজ পথ ধরি।
হেঁটে হেঁটে পরিশ্রান্ত, অথচ মঙ্গলালোকে পৌঁছে
যাই, দেখি রবীন্দ্রনাথের মুখ উদিত সূর্যের মতো। তাঁর
মেটে রঙ আলখেল্লাটিকে চুম্বন করার সঙ্গে কবিকণ্ঠ জাগে-
‘কী প্রার্থনা তোমার পথিক? কবি সার্বভৌম; শুধু আপনার
খানিক চরণধূলি ছাড়া আর চাই না কিছুই।

আখেরে অপরিসীম নগ্নতার আভায় প্রোজ্জ্বল
দীনবেশী আমি যাত্রা করি দিগন্তের অন্তরালে দিগন্তরে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 125

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts