Poem

অসহায় পঙ্‌ক্তিমালা

শামসুর রাহমান

অবসন্ন কবি কি নিঝুম বসে ছিলো নিজ ঘরে এক কোণে
বেতের চেয়ারে মধ্যরাতে। আচানক
কে কবিকে চটকানা মারলো নিশীথে? হুড়মুড়ে
শব্দ কী দাপট

দেখায় চৌদিকে! আসমান যেন অনেক নিচুতে
নেমে এসে ভেঙচি কাটে। রাতজাগা শায়ের পড়ন্ত
তারাদের লুফে নিতে হাতের তালুতে
বেজায় তৎপর হয়। অন্তরালে ক্ষুধার্ত ইঁদুর
কবির সাধের পাণ্ডুলিপি চেটেপুটে খেতে থাকে। পাণ্ডুলিপি
নিমেষে মিলায় শূন্যে, কবি করতলে নক্ষত্রের মালা নাড়ে!

উদাসীন শায়েরর দৃষ্টি শুধু ক্ষ্যাপা আসমানে
সেঁটে থাকে বহুক্ষণ, যেন মুখস্থ করছে সব
খুঁটিনাটি প্রতিক্রিয়া নক্ষত্র এবং
ভীষণ পীড়িত চন্দ্রমার। এ কেমন
গজব পড়ছে চতুর্দিকে বহুকাল ধরে, ভেবে
অতল বিষাদে ডোবে কবি হাহাকার বুকে নিয়ে!
কে যেন প্রবল ঠেলে দিতে থাকে তাকে বড় কণ্টকিত পথে
এ গহন রাতে। মেঘ চিরে ফুঁড়ে খাপছাড়া এক
মুখ করে উচ্চারণ, ‘জনহীন পথে একা হেঁটে যাওয়া ছাড়া তোর
মুক্তি নেই। অন্তরাল থেকে কেউ নাড়ছে নাছোড়
কলকাঠি-‘চল মুসাফির, এই পথে চল’ বাক্য
হতবাক শায়েরের একান্ত পরিচালক যেন।
ধীরে হেঁটে যেতে যেতে বহুদূর শায়ের নিজেকে পেয়ে যায়
বিয়াবান এক
এলাকায়; ‘এসো, এসো’ ব’লে কারা তাকে
কাছে টানে, অথচ সেখানে থমথমে
জনহীন স্তব্ধতাই উটের ধরনে
বাড়িয়ে রয়েছে গলা। স্পন্দমান প্রাণীর অস্তিত্ব নেই কোনো।

অকস্মাৎ শায়ের নিজেকে মানবরূপী অন্ধ পশুদের
দঙ্গলে ভীষণ একা দেখে নিমেষেই
বড় হিম হয়ে যায়। আসমানে ভাঙাচোরা চাঁদ
বাঁকা হাসি হেসে ভীত কবির পুরোনো এক
কবিতার কতিপয় পঙ্‌ক্তি ছুঁড়ে দেয় নিচে-
অসহায় পঙ্‌ক্তিমালা কী বিধুর ধুলোয় গড়ায়।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 118

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts