Poem

ইচ্ছে হয় চাঁদটিকে ছিঁড়ে আনি

শামসুর রাহমান

যে যায় তোমাকে ছেড়ে দূরে, বহুদূরে, প্রকৃতই
সে কি চলে যায়। না, সে যায় না তোমাকে
ছেড়ে অন্য কোনও খানে। সে-তো
কখনো হঠাৎ ভোরবেলা সহস্র মাইল থেকে
তোমার শয্যার পাশে এসে
দাঁড়ায় প্রসন্ন মুখে এক লহমায়, স্মৃতিময় কথা বলে।

যদি বলো কাউকে এ-কথা, নিশ্চিত সে
গাঁজাখুরি গপ্প ভেবে হেসেই উড়িয়ে দেবে, জানি। এ-ঘটনা
বান্ধব মহলে রটে যাবে। কেউ কেউ
বলবে নিশ্চিত, “শোনও, শোনও, আমাদের
বন্ধুটির ভীষণ উর্বর মাথা, ওহে
বেজায় বিগড়ে গেছে। এক্ষুণি পাঠাও ওকে পাগলা গারদে।

কখনো, কখনো দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদে, কখনো-বা মধ্যরাতে
তোমাকে জাগিয়ে তোলে ঘুম থেকে আর
শোনায় স্বপ্নিল সুরে কৈশোরের খেলার মাঠের
কাহিনী, তুমি কি ওকে ভর্ৎসান ক’রে
তক্ষুণি তাড়িয়ে দেবে বিরানায়? তোমার কি সেই
স্মৃতিকথা উপভোগ্য মনে হবে? অবশ্যই নয়।
ধরা যাক, যে যুবতী একদা আমাকে ভালবেসে
আমার যৌবনে দূর দেশে চলে গেছে, যদি সে নিমেষে এসে
দাঁড়িয়ে আমারই পাশে অপরূপ হাসি দেয় উপহার, তখন এ বান্দা
মুহূর্তে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াবে কি তার পাশে? সে-তো
এসে পড়ে নিমেষেই মাঝে মধ্যে, করে না পরোয়া কারও, এই
এমন কি বয়সের ভারে জব্দ আমারও কখনো।

নিদ্রোহীন মাঝরাতে বস্তুত ছিলাম মগ্ন একটি ধূসর
কাব্যগ্রস্থ পাঠে; অকস্মাৎ কানে এলো
কার যেন গাঢ় কণ্ঠস্বর, “কেন তুমি নিজেকেই
দিচ্ছ ফাঁকি লুকোচুরি খেলায় এমন
মেতে উঠে? এই খেলা কারো কারো দিবাস্বপ্ন দিব্যি
সুখকর করে তোলে। না, হবে না যার স্বপ্নে তুমি মশগুল”।

ঈষৎ চমকে উঠি উটে, তবে ভীতি ব্যর্থ হয়
আমাকে ঘায়েল ক’রে জন্মন্ধ গুহায়
ঠেলে দিতে। হাতের ধূসর কাব্যগ্রন্থ বিছানার
এক পাশে রেখে উঠে পড়ি। মনে হলো, এখন আকাশ থেকে
চাঁদটিকে ছিঁড়ি এনে শহরকে শতগুণ আলোকিত ক’রে
অশুভ আন্ধার চিরতরে ঝেঁটিয়ে বিদায় ক’রে দিতে পারি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 197

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts