Poem

এ শহর ঢাকাতেই

শামসুর রাহমান

মধ্যে মধ্যে ডাক শুনি, দয়াবান তরুণ রোদ্দুর,
বহু বৃষ্টি, বহু দীর্ঘ পথ-পেরুনো গভীর ডাক।
ইচ্ছে হয় এ শহর ছেড়ে চলে যাই,
থাক এই চেনা গলিপথ,
প্রবীণ বসতবাড়ি থাক
অনেক পিছনে পড়ে।
তেতো হয়ে আসা
শস্তা চুরুটটা মুখে চেপে যাই চলে
শব্দের তাড়না থেকে দূরে।

গাঢ় সেই ঢাক শুনে স্বপ্নের গভীর
স্তব্ধতার মতো কোনো নৈঃশব্দ্যের দিকে
যাত্রা করে এ শহুরে রেখাবলী ভুলে যাই যদি,
বলোতো কেমন হয়? কারো কিছু এসে যায় তাতে?

শহরের শেষ প্রান্তে ফ্যাক্টরির চোঙ, ঝিল্লিস্বর,
সমস্ত পিছনে ফেলে পা বাড়ালে দূরে
বুদ্ধের কাঠের মূর্তি, ফ্রেমে-আটা ছবি,
ধবধবে বারান্দাটা, সন্ধ্যা-ছোঁওয়া, চুপ
নানান ফুলের টব, অন্তরঙ্গ টেবিল এবং গ্রন্থমালা
সঙ্গে যায়। আমার শার্টের ভাঁজে ভাঁজে,
কাদা-মাখা জুতোর ওপরে স্মৃতিগুলি সুদিনের
নক্ষত্রের মতো দিব্যি জ্বলজ্বল করে।

এ শহর মাতৃগর্ভ যেন,
আঁধারের রহস্যময় প্রাচীন তারার স্বপ্নে দয়ালু উজ্জ্বল,
নৈকট্যের স্মৃতিতেই উষ্ণ চিরকাল। বুঝি তাই ফিরে আসি
বারবার তেতো-হয়ে আসা চুরুটটা মুখে চেপে।

দীর্ঘ পথ ঘুরে ঘুরে পদযুগলের হাড় ক্রমশঃ নিঃসাড়
হয়ে এলে নিজেকে কেবলি এ শহর ঢাকাতেই
রাত্রির পার্কের
পাথুরে বেঞ্চের মতো ভীষণ নিঃসঙ্গ মনে হয়।
তখন আমার গ্রীবা
শহরের সবচেয়ে উঁচু বাড়িটার মতো হয়ে যায় আর
চোখ দুটো হাঁস-ভাসা লেক, ক্লান্ত মুখ
জনতা-মথিত এভেনিউ।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 164

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts