Poem

কবিকে দিও না দুঃখ

শামসুর রাহমান

কবিকে দিও না দুঃখ, দুঃখ দিলে সে-ও জলে স্থলে
হাওয়ায় হাওয়ায়
নীলিমায় গেঁথে দেবে দুঃখের অক্ষর। কবি তার নিঃসঙ্গতা
কাফনের মতো মুড়ে রাখে আপাদমস্তক, হাঁটে
ফুটপাতে একা,
দালানের চূড়ায় চূড়ায়, দিগন্তের অন্তরালে
কেমন বেড়ায় ভেসে, চাঁদের নিকট যায়, নক্ষত্র ছিটোয় যত্রতত্র
খোলামকুচির মতো। তাকে দুঃখ দিও না, চৌকাঠ থেকে দূরে
দিও না ফিরিয়ে।
ফেরালে নক্ষত্র, চাঁদ করবে ভীষণ হরতাল, ছায়াপথ তেজস্ত্রিয়
শপথে পড়বে ঝরে, নিমেষেই সব ফুল হবে নিরুদ্দেশ।

প্রায়শ পথের ধারে ল্যাম্পোটে হেলাল দিয়ে খুব
প্রচ্ছন্ন দাঁড়িয়ে থাকে, কখনও-বা সীমাহীন রিক্ততায়
রেস্তরাঁয় বসে
বান্ধববিহীন বিষাদের মুখোমুখি
নিজেই বিষাদ হয়ে। মাঝে মাঝে মধ্যে চৌরাস্তায় খুঁড়ে তোলে এক
গোপন ফোয়ারা পিপাসার্ত পথিকেরা আঁজলা ভরবে বলে।
আবার কখনও তার মগজের উপবনে লুকোচুরি খেলে
খুনি ও পুলিশ!

মধ্যরাতে শহরের প্রতিটি বাড়ির দরজায় কিছু ফুল
রেখে আসে নিরিবিলি কাউকে কিছু না বলে! কবি সম্মেলনে
রাজধানী আর মফস্বলে স্টেজে কয়েক ডজন
পংক্তির জ্যোৎস্নায় রৌদ্র পুনরায় স্নান সেরে স্বকীয় গোপন
ঘুলঘুলিটার
দিকে চোখ রেখে নীলিমার সঙ্গে বাণিজ্যের কথা ভাবে, ভাবে
সুদূর অনন্ত তাকে চোখ টিপে বেঘোরে ঘোরাবে কতো আর?
কবি সম্মেলনে তেজি যুবরাজ, প্রেমের নিকট বাস্তবিক
বড়ো নগ্ন, বড়ো অসহায়!
কবিকে দিও না দুঃখ, স্বপ্নের আড়ালে তাকে তীব্র
আবৃত্তি করতে দাও পাথর বুক, গাছ,
রমণীয় চোখ,
ত্বক, হেঁটে যেতে দাও ভিড়ে নিজের ভেতরে। রোজ
হোক সে রূপান্তরিত বার বার। নিজস্ব জীবন রেখেছে সে
গচ্ছিত সবার কাছে নানান ধরনে অকপট।
কবিকে দিও না দুঃখ, একান্ত আপন দুঃখ তাকে
খুঁজে নিতে দাও।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 498

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts