Poem

এইতো ক’দিন মাত্র তুমি নেই এ শহরে, অথচ আমার
মনে হয়, অনেক আলোকবর্ষ তোমাকে দেখি না,
কত যে সভ্যতা লুপ্ত হলো, তারপরও
শুনি না তোমার কণ্ঠস্বর
এবং তোমার
আশ্চর্য হাসির জলতরঙ্গ বাজে না
যুগ যুগ ধরে।

কী যে হলো এ শহরে, একটি পাখিও
পড়ছে না চোখে
তুমি চলে যাবার পরেই। গাছপালা
কোথায় উধাও হলো? সারি সারি বাড়ি,
সকল দকানপাট, সুপার মার্কেট,
বিউটি পার্লার আর রঙিন সিনেমাহল, সাকুরা এবং
ক্যাথে, কোহিনূর, যাবতীয় স্ন্যাকবার
মিষ্টান্ন ভাণ্ডার উবে গ্যাছে অকস্মাৎ
যেন কোনো ঐন্দ্রজালিকের ফুঁয়ে।
বাগানে ফোটে না ফুল এ শহরে বস্তুত কোথাও।

কোথাও বাধেনি যুদ্ধ, অথচ শহর নিষ্প্রদীপ সন্ধ্যেবেলা
থেকে, যানবাহনের শব্দ লুপ্ত, দমকলবাহিনী অলস,
এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সও অচল ক’দিন
যাবত, শিশুরা খেলা ভুলে প্রিয় পুতুলের বিয়ে
করেছে বাতিল, বাস্তবিক প্রেমালাপ থেমে গেছে
সবখানে; তরুণী গাঁথে না মালা, সংগ্রামী তরুণ
লাগায় না পোস্টার দেয়ালে রুদ্র তেজে, আসমানে
মড়ার খুলির মতো চাঁদ রোষে ডেকেছে হরতাল।

এ কেমন শহরে এখনো বেঁচে আছি? হিংস্র, ধুধু মরুভূমি
ঢাকাকে করেছে গ্রাস, প্রেতায়িত অলিগলি। যায়,
দিন যায়, রাত কাটে ছায়াময়তায়, চতুর্দিক
কী নিশ্চুপ, এমনকি কুকুরের ডাকে
সীমাহীন নৈশ নিস্তব্ধতা একবারও
চমকে ওঠে না।

চারদিন নয়,
কয়েক শতাব্দী পর হঠাৎ সকালবেলা টেলিফোন, একি
আবার তোমার কণ্ঠস্বর
আমাকে মধুর চুমো খায়।
পরিপার্শ্ব কেমন বদলে যায় লহমায় আর
গাছপালা, পাখি, মেঘমালা, ফুল, হাওয়া-
সবাই রটিয়ে দেয় দিকে দিকে, ‘এসেছে সে ফিরে।
এ খবর পেয়ে সমস্ত শহর
অলৌকিক কলরব করে। এ শহর এর আগে
এরকম সজীব হয় নি মনে কোনোদিন। মিনতি আমার,
কখনো এভাবে আর এ শহর ছেড়ে
যেও না কোথাও।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 528

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts