Poem

আমার একটি দুঃস্বপ্ন

শামসুর রাহমান

ঘুমন্ত এই শহরের প্রতিটি দরজায়
আমি আজ বেপরোয়া করাঘাত করে চলেছি
বেখবর নাগরিকদের জাগিয়ে তোলার জন্য।
এখনও আমার শরীরে দুঃস্বপ্ন, কৃষ্ণ গহ্বর,
বন্য হিংস্র লতা, চোরাবালি এবং
গন্ধক আর গরম সীসার তীব্র গন্ধ।

দোহাই আপনাদের, এই গন্ধে ফিরিয়ে
নেবেন না মুখ; বন্ধ দরজা খুলে দয়া ক’রে
শুনুন আমার কথা। না, আমি কোনও
কৃপা ভিক্ষা করতে আসিনি, সামান্য খুদকুঁড়ো অথবা
সিকি-আধুলি প্রাপ্তির আশায় নয়
আমার এই ব্যাকুল করাঘাত। এই যে দেখছেন
আমাকে আলুথালু বেশ, উশ্‌কো খুশ্‌কো চুল;
না-কামানো খোঁচা দাড়ি, আমি অধীর
একজন বার্তাবহ ছাড়া কিছুই নই। দুঃস্বপ্ন
আমার ভেতর পুরে দিয়েছে এক ভয়াবহ বার্তা।

আপনারা কেউ কি শুনতে পাচ্ছেন না
কোনও পদশব্দ? দেখতে কি পাচ্ছেন না
ভয়ঙ্কর একপাল না জন্তু-না মানুষ
তেড়ে আসছে চৌদিক থেকে? ওদের দাঁত-নোখে
লেগে আছে পুরনো আর নতুন রক্তচিহ্ন,
মানুষের হাড় দিয়ে ওরা পেটাচ্ছে কান-ফাটানো
ঢাকঢোল, ঘুরঘুট্রি অন্ধকারে ওদের
বসতি, আলোর ঝলকানিতে তিমিরবিলাসী
বাশিন্দাদের অস্তিত্ব ঝলসে যায় বলেই
ওরা আমাদের স্বাধীনতার অনন্য শিখাটিকে
নিভিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোঁট পাকাচ্ছে,
কিন্তু আমাদের হৃদয়ে সেই শিখা সূর্যোদয় হয়ে
জ্বলছে। ওরা কীভাবে নেভাবে
কোটি কোটি হৃদয়ের দেদীপ্যমান সূর্যোদয়?
দুঃস্বপ্নের সংবর্তে আমি শুনেছি
শকুনের মতো ওদের নখর বলছে, ওরা সাম্প্রদায়িক;
নেকড়ের চোখের মতো ওদের চোখ বলছে, ওরা হিংস্র ঘাতক;
মন্ডুকের মতো ওদের লাফালাফি বলছে,
ওরা কূপমন্ডুক আর কুসংস্কারের উপাসক;
ওদের পশ্চাদগামী অপযাত্রা বলছে, ওরা প্রগতি-বিরোধী।

দুঃস্বপ্নের ভেতরে আমি শুনেছি ওদের অশুভ নিঃশ্বাস,
ওদের দানবিক পদশব্দ। হে ঘুমন্ত নাগরিকবৃন্দ,
আপনাদের প্রতিটি দরজায়
করাঘাত করে চলেছি অবিরাম;
দোহাই আপনাদের, একটু গা ঝাড়া দিয়ে উঠুন,
আমার দুঃস্বপ্নকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেবেন না।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 112

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts