Poem

আমার আঁজলা পূর্ণ হোক

শামসুর রাহমান

এমন কুয়াশা আগে কখনও নামেনি চতুর্দিকে
আমার ঘনিষ্ঠ ছাঁদে। আজ বেলাশেষে
প্রতারক জালে বন্দী হ’য়ে
মোহগ্রস্ত চোখে দেখি কে এক অস্পষ্ট ছায়াবৃতা
ঘোড়ামুখী নারী দূরে একাকী দাঁড়িয়ে
কী মন্ত্রে আউড়ে দেয় মায়াবী সঙ্কেত। আমি সেই
ছায়ার পেছনে গিয়ে খাদের কিনারে
পৌঁছে যাই; ক’জন পিশাচ নীল নক্‌শা অনুসারে
আমাকে রক্তাক্ত ক’রে খাবলে খুবলে
জন্মন্ধ খাদের নিচে পশুর আহার্য ক’রে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
ঘোড়ামুখী নারী, সমস্ত শরীরে বিষকাঁটা,
অতিকায় বাদুড়ের রূপে ওড়ে চক্রাকারে, আমি
অসহায় প’ড়ে থাকি কাঁটাবিদ্ধ, একা
ভীষণ দুর্গন্ধময় খাদে নিজ দোষে। হায়, যাকে
অন্ধকারে রেখে মোহে ম’জে
ছলনার পেছনে ছুটেছি
অকালে অন্ধের মতো, সে-ই তো উদ্ধার
আমার, অথচ তারই হৃদয় বিদীর্ণ ক’রে ছাই
উড়িয়েছি জীবনে আমার। কোন্‌ দোয়েলের গান
আবার করবে যুক্ত দু’জনের হাত?


কী এক দুর্মর ঘোরে দেখি বিষাদ আমাকে নেয়
সম্পূর্ণ দখল ক’রে। দেখি
মায়াকোভস্কির মেঘচারী ট্রাউজার্স,
জীবনানন্দের কাশফুল-ধুতি ওড়ে
গোধূলি মেঘের স্তরে স্তরে।
বিষণ্ন দস্তয়ভস্কি জুয়োর টেবিলে হেরে গিয়ে
বারবার শেষে জিতে নেন অমরতা,
এবং কীটস্‌-এর বুক-ছেঁড়া উষ্ণ রক্তধারা
ব’য়ে যায় ওডে ও সনেটে;
রবীন্দ্রনাথের আলখাল্লাকে চুম্বন করে রিল্কের গোলাপ।

যার শুদ্ধ ক্ষমাময় শুশ্রূষায় লহমায় সেরে যেতে পারে
আমার অসুখ, সে কি আমার শরীর থেকে বিষকাঁটা তুলে
নেবে নির্দ্বিধায়? তার হৃদয়ে আবার
ফুটবে কি ফুল প্রতি মুহূর্তেই আমার উদ্দেশে? তার ওষ্ঠে,
আর তার যমজ স্বর্গীয় ফলে পূর্ণ অধিকার
কখনও পাব কি ফিরে? স্খলনের ক্ষণিক তিমির
ধুয়ে মুছে যাবে নাকি উদার আলোয়? যদি নেপথ্যে ইয়েটস্‌
করেন নিবিড় সুপারিশ, তবে দয়িতার তীরে
সহজে ভিড়তে পারে পুনর্বার আমার আহত
ভ্রষ্টতরী; নেরুদা থাকেন চেয়ে সমুদ্রের দিকে। আমি তার
পাশে ব’সে দেখি দূরে রুমির আস্তিনে জ্বলে চাঁদ,-
আমার আঁজলা আজ পূর্ণ হোক মরমীর জ্যোৎস্না-মদিরায়।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 96

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts