Poem

অসুস্থ কবিকে নিয়ে

শামসুর রাহমান

‘অসুস্থ কবিকে নিয়ে কত আর পারা যায় বলে
কেউ কেউ ডেটল, ওষুধ ইত্যাদির
গন্ধ থেকে দূরে চলে যায়। কবি, তুমি
আর মন খারাপ করো না। শুয়ে থাকো একা-একা
স্বপ্ন ভর করা বালিশের নরমে আবিষ্ট মাথা
রেখে, যে মাথায় সূর্যাস্তের পেখম এবং ফোটে
গোলাপ, রজনীগন্ধা রাশি রাশি, বাজে বাঁশি আর
বন দোয়েলের
পাখায় পিছলে পড়া জ্যোৎস্না
কেবলি গড়াতে থাকে। শুয়ে থাকো নিভৃতে নিশ্চুপ,
শ্বাসকষ্ট হলে হোক, চোখে
অশ্রু জল আসতে দিও না। কার সঙ্গ পেতে চাও?
এমন কেউতো নেই যে ভরাতে পারে এরকম নিঃসঙ্গতা!

তুমি কি উগরে দিচ্ছো স্মৃতি? রক্তবমি করলেও
স্মৃতির আঙুরলতাগুলি
দেবে না নিস্তার; নিদ্রা যাও চুপচাপ
শিশুর ঘুমের মতো ছাঁচে?

আয়নাটা খুঁজছো বুঝি? দেখে নিতে চাও
এক ফাঁকে তোমার আজকার মুখ? থাক থাক
না-ই বা দেখলে; তুমি একটি বেগানা
লোককে, যীশুর মতো যার
মুখ আপাতত তেলছুট চুল আচড়াতে চাও
পরিপাটি? তুমি কি অসুস্থ বাস্তবিক?
এ কার রহস্যময় ছায়া
দাঁড়ানো তোমার দরজায়? নচিকেতা
তোমার ভেতরে এসে তোমার সত্তাকে
দেয় না ঘুমোতে। অথচ এখন
তোমার ঘুমানো প্রয়োজন। ঝরুক তোমার চোখে শুকনো পাতা।

কারো চুল, চোখ, ঠোঁট, বুকের উদ্দেশে
বাড়িও না শীর্ণ হাত। রোদ-জ্যোৎস্না হাওয়া,
কখনো বৃষ্টির ছাঁট এসে
খেলবে তোমার সঙ্গে। হাওয়া বিলি কেটে
দেবে চুলে, কাল্পনিক জ্বরে পুড়ে গেলে চওড়া কপাল,
জ্যোৎস্না প্রলেপ বুলিয়ে দেবে চন্দনের।

যে তোমাকে ছেড়ে যাবে, তার কথা কেন দিন নেই
রাত নেই ভাবো? চুপ চাপ পড়ে থাকো,
যেন তুমি এই পৃথিবীর কেউ নও
মিশে থাকো গোধূলির বিষণ্ন আলোয়।

সাত পাঁচ ভেবে কেন খামোকা নিজেকে কষ্ট
দিচ্ছো? সে এখন কোথায় রয়েছে কোন সাজে
লাস্যময়ী? কবি সম্মেলন
এখানে তুমি না থাকলেও
চলবে, ভেবো না অনর্থক। উস্‌খুস্‌
কোরো না হে কবি, কবিতার খাতা আর
না-ই বা খুঁজলে, নিরিবিলি
ঘুমাও এখন ছেলেবেলাকার শান্ত নদীটির মতো।
শব্দ আর ছন্দ যত খুশি
থাকুক বিবাদে মেতে, কী দরকার তোমার সে দাঙ্গা
ঠেকানোর? লিখো না কিছুই তুমি আর
দ্যাখো শুধু চেয়ে দ্যাখো, নিরন্তর ব্যথা তুলে নাও;
অন্যেরা লিখুক।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 352

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts