Poem

ঝুঁটি দোলানো নাচ

শামসুর রাহমান

আমার মুঠোয় তোমার স্তন বেহেশতের দ্যুতিময় বিষিদ্ধ ফল
আমার ওষ্ঠঁ তোমার ঠোঁট থেকে
শুষে নেয় আবেহায়াত
আদ্যোপান্ত পাঠ করি তোমাকে জ্ঞানার্থীর নিষ্ঠায়
তোমার চোখের পাখির পাখা আলতো গোটানো
বুকে ঝড়ের আগে মেঘনা নদীর তোলপাড়
দ্রুত সরিয়ে নাও নিজেকে
হয়তো শুনতে পেলে পদশব্দ কাপড়ের খসখসানি
আমার হৃদয় পূর্ণিমা হতে হতে অমাবস্যা
অদৃশ্য ফেরেশতা ঝুঁকে চুমু খেলেন তোমার মাথায়
কালো চুলে নক্ষত্রের মতো দোয়ার ঝলসানি
সম্বিৎ এবং স্থৈর্যের প্রতিমা তুমি

কী করে পারো এভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারো
নিজের শরীর এক ঝটকায়
কী ভাবে করেছো রপ্ত এমন প্রশান্তির মুদ্রা
কুকুরের কানের মতো ঝুলতে থাকে আমার অবসন্ন আবেগ
তোমার আঙুলে প্রজাপতির পাখনার কম্পন
মনে হয় বসে আছো পরীস্তানে আলসেমির গালিচায়

সোফার হাতলে তোমার হাত গুণীর সোনালি বাদ্য
উঠে দাঁড়াও শাড়ির আঁচল সামলে সুমলে
উৎসবরাতে রঙিন বাতিখচিত গাছের যৌবনের উত্থান
তাকাও আমার দিকে জ্যোৎস্নাঝলসিত
নহরের মতো গভীর দৃষ্টিতে
যেন ভালোবাসা এই প্রথম চোখ মেললো

যদি তুমি মুখের উপর দড়াম বন্ধ করে দাও দরজা
কখনো শঙ্খিনী আক্রোশে
আমার হৃদয় গুঁড়িয়ে যাবে পথে ছড়ানো
দুর্ঘটনাকবলিত মোটর কারের কাচের মতো
সেদিন আফ্রিকার অরণ্যে আমার পথ হারানো
রাসায়নিক বৃষ্টিতে ঝলসে-যাওয়া
আমার মুঠোয় আবার তোমার গরবিনী স্তন
পুনরায় ক্ষণকালীন চুম্বন প্রায় বিটিভির
বিদেশী ছবির চুম্বন-দৃশ্যের ধরনে
বিচ্ছেদের সুরমা রঙের ছায়া অস্তিত্বে
দখলীস্বত্ব লিখে দেয়া যন্ত্রণার অনাড়ম্বর হরফে
প্রেতের পদহীন পদশব্দে অন্ধকার-খরগশ উৎকর্ণ

অজ্ঞাত ভয় দেয় না ঘুমোতে
গৃহকোণের টেবিলে বইয়ের স্তূপ কখনো বৌদ্ধবিহার
কখনো রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীপতি ক্রেজি হর্সের তেজী মাথা
অপ্রেমের শয্যায় শুয়ে থাকি কাঁটাবন্দী
আগামীকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক
ভালোবাসার ঝুঁটি-দোলানো নাচ

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 123

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts