Poem

শামসুর রাহমানের সঙ্গে

শামসুর রাহমান

সে এখন বহুদূরে, একা একা থাকে সারাদিন,
এভাবেই বেলা যায় এবং ঈষৎ ভাঙা গালে
গজায় সফেদ তৃণ, নিয়মিত চুল ঝরে; হায়,
অবসিত দূরন্ত কেশর। বহুদিন
পর তার সঙ্গে দেখা করবার সাধ হ’লো। বাড়িতেই ছিল,
প্রায়-প্রেত, গানে-পাওয়া, খানিক বিব্রত।
‘এখন কেমন আছ,’ শুধারেই, বলে সে হাসার
চেষ্টায় অধিক স্লান, ‘ভাল, বেশ ভাল, তুমি? কণ্ঠস্বরে
নিস্পৃহতা, যেন রুক্ষ সান্ন্যাসী, তবুও
তার খোল থেকে তাকে বের ক’রে আনার ইচ্ছায়
বলি, ‘ভাই চল যাই, কোথাও বেড়িয়ে আসি।‘ ভাবলেশহীন
দাঁড়ানো, প্রস্তাবে উদাসীন।

অনন্তর ব’সে থাকা; চা খাওয়া, অতীত
টেনে আনা লাটাইয়ের সুতোর মতন, লেখা না লেখার
অর্থহীনতায় নিমজ্জিত
কণ্ঠস্বর তার; বলে এক ফাঁকে ‘কবির, প্রতিভা
মুছে যায় হাজার হাজার মূর্খ আর উন্মাদের হট্ররোলে, অট্রহাসি
বেজায় নাকাল করে দরবারী কানাড়াকে আজ।‘

শুনি তার সমাচার আর
ভাবি, যাকে জানি স্বল্পবাক বরাবর,
সে কেন এখন এত বেশি কথা বলে
সূর্যোস্তের দিকে মুখ রেখে? কতিপয়
ক্ষিপ্র যুবা, জিনস্‌-এর ট্রাউজার, বুক-খোলা শার্ট, গলায় সোনালি চেন,
হোন্ডায় সওয়ার, ভুল স্লোগানের মোহে আত্মাহারা।
ব’সে আছি আমরা দু’জন মুখোমুখি; অন্ধকার
ডানা মেলে। ‘এইসব যুবা
আত্মপরিচয় ছিনতাই ক’রে মশগুল খুব, উপরন্তু
জন্তুর চেয়েও হিংস্র ভ্রাতৃহননের মহড়ায়
দক্ষতার চূড়া স্পর্শ করে, ওরা পিতৃঘ্ন সবাই।‘ তার কথা
পাথরের চাপ, অস্বস্তির কাঁটায় অস্থির হই।

এখনও কবিতা তাকে মাঝে-মাঝে পাঠায় মদির পত্রাবলী,
কে এক নিভৃত ডাক পিয়ন, উড্ডীন,
বিলি করে বেলা অবেলায়; পাড়টা যখন কোনও
আফিমখোরের মতো ঝিমুনিতে বিহ্বল, তখন
নিজের সঙ্গেই তর্ক করে, যেন আমি নেই পাশে। দু’একটি
পাতা উড়ে আসে অন্ধকার ক্রমশ দাঁতাল হয়।

কেমন বদলে যায় চেয়ার বারান্দা, ছবি, বই; যেন দেবোপম ব্লেক

অদূরে আছেন ব’সে রাধাচূড়া গাছটির মগডালে। পেঙ্গুইন পাখি
অকস্মাৎ; শব্দেরা মাছের মতো ঘিরে
ধরে তাকে, ত্র্যাসট্রে কোকিল, ডাকে। এত দূরে থাকে
শহরে এক প্রান্তে, তার কাছে তবুও আসব বার বার।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 145

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts