Poem

যে-ঘরে আমার বসবাস

শামসুর রাহমান

যে ঘরে আমার বসবাস, তার সঙ্গে সূর্যালোক
বেজায় কার্পণ্য করে। ফলত মনের ঘাটে বিষাদের ছায়া
প্রত্যহ বিস্তৃত হয়, যেন কেউ মৃত্যুর খবর
শোনাবার ব্যাকুলতা নিয়ে ব’সে থাকে সারাক্ষণ
আমার শয্যায় ঠিক মর্মর মূর্তির মতো; তাকে
হেলায় হটিয়ে দেবো, শিখিনি এমন মন্ত্র আজও।

কখনও কখনও সুন্দরীর রূপ ধরে, অধরের তাপ দেয়
আমার তৃষিত ঠোঁটে, বুকে
টেনে নেয় মোহন ভঙ্গিতে, অকস্মাৎ
বিস্মিত নিজেকে দেখি এক পিশাচীর আলিঙ্গনে
বিমূঢ় কয়েদী আর মুখের ভেতর
সীসার, দস্তার গন্ধ, মেরুদন্ড হিম হ’য়ে আসে।
মধ্যরাতে দুঃস্বপ্নের শ্বাসরোধকারী চাপ থেকে খুব ঘেমো
অশক্ত শরীরে জেগে উঠি। পাশে নেই
জীবন সঙ্গিনী; সে এখন
হাসপাতালের বেডে। সফেদ হাঁসের মতো নিঝুম সেবিকা
হয়তো বড়ি দিয়ে তাকে ঘুম
পাড়িয়ে নিজস্ব ডেস্কে ব’সে দেখছেন হাতঘড়ি।
এখন যে নেই পাশে তার
অভাব কামড়ে ধরে নিয়ত আমাকে উন্মাদিনী
বেড়ালের মতো; মনে পড়ে ফুলশয্যা কবেকার, থরথর
বিবাহিত ঠোঁটে
প্রথম চুম্বন আর মিলনের উন্মথিত রাত;
অনেক বছর আগে রতিতৃপ্ত তার মুখে ভোরবেলাকার প্রসন্নতা

মনে পড়ে, প্রায় তিন যুগ আগে
প্রথমবারের মতো তার উদরের ষ্ফীতি, বিবমিষা, বমি;
অনন্তর একদিন ম্যাডোনার ধরনে নতুন
খাটে বসে থাকা পরিজনদের মাঝে,
সন্তানের দিকে স্মিত তাকানো এবং অন্তরালে
স্তন্যদান, কত দ্রুত কালো ঘোড়সওয়ার সর্বদা ধাবমান।
এইতো সেদিন গেল আরোগ্য নিবাসে, মনে হয়
কতিপয় শতকের হাওয়া ছুঁয়ে যায়,
আমার বুকের মধ্যে হৈমন্তিক ঝরা পাতাদের হাহাকার।
সে কবে আবার পার্শ্ববতী ধু ধু শূন্যতাকে ভরিয়ে তুলবে
পরিচিত ঘ্রাণে আর আলোছুট ঘরে এসে বাদ বিসম্বাদে
আমাকে নাজাত দেবে পিশাচীর বাহুপাশ থেকে?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 107

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts