Poem

শুদ্ধতার জন্য

শামসুর রাহমান

‘আর নয় কটুবাক্য বান্ধব, নিদেন পক্ষে দু’ এক বিঘৎ
পবিত্রতা থাকুক বজায়, স্মিত তিনি
বললেন চায়ের কাপে ঠোঁট রেখে সিদ্ধার্থের চেনা
মুদ্রা ধার ক’রে, সুহৃদের সুবচন
অর্চনার অন্তর্গত, ধুপ-ধুনো জ্বালি। চেয়ে থাকি
নিষ্পলক, যেন আমি হাতকড়া পরা অপরাধী।

শুধু সুরে দোয়েল করাচ্ছে স্নান নিঝুম বাড়িকে
অবিরত, এরকম জন্মে শুনিনি; মনের ঘাটে
টলটলে জল ছল্‌কে ওঠে
বার বার। চড়চড়ে দুপুরের বুক চিরে
রিকশা-অলা চলেছে কোথায়,
তার স্নানাহার
স্থগিত এখন ভেজা পিঠে ছন্দিত প্রশ্নের মৃদু
ওঠা, পড়া, বিশুদ্ধতা কতদূর? ‘কাছে ধারে
পুষ্করিনী পেয়ে গেলে গা’ ধুয়ে পবিত্র হব’ ব’লে
সে দ্বিগুণ গতিবেগে চালায় প্যাডেল।
পরীবাগে বাগিচার ঘ্রাণ চুরি ক’রে নিয়ে গেছে
ক’জন মেথর, যারা থর থর কাঁপে
সমার্জনী হাতে পৌরসভার মেজাজ
পারদের মতো চ’ড়ে গেলে। গলা অব্দি আবর্জনা
আমার, উৎকট গন্ধ, ভন্‌ভনে মাছি; লগবগে
নীতি টুটি চেপে ধরে, উঠে এসে পা পিছলে পড়ি
পরীদের হাম্মামে হঠাৎ, হাবুডুবু খাই, পারি না নিশ্বাস
নিতে, তবু শরীর ভেজে না।
বেজন্মা রাস্কেল ব’লে বিষম চেঁচাই প্রায়শই,
ভাঙাই পাড়ার ঘুম, বন্ধুর সদুপদেশ মাঠে
মৃত; একবার বাগে পেলে হয়, কোনও স্কাউন্ড্বেল
ঝর্ণা তলে এক ফোঁটা পানিও পাবে না
কিছুতেই। লোকে বলে, একরোখা কুলাঙ্গার আমি;
শ্যামলিমা আমার নিকট থেকে দূরে
চলে গেছে ভিতরের ঘরে,
প্রিয়ম্বদা কেউ নেই, যে আমার দায়ভাগ ব’য়ে
পাঠাবে শোধনাগারে আর মিষ্টি মুখ
করাবে পালা পার্বণে। নিরক্ষর চাঁদ
খিস্তি খেউড়ের মেঘে অকৃপণ মাধুর্য ছড়ায়;
আমি তো পতনশীল, কী ক’রে অস্থির হাতে শুদ্ধতার পারাবত ছোঁব?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 99

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts