Poem

যে পাখিকে আব্বা

শামসুর রাহমান

সে এসে বসলো খোলা বারান্দায়
তাঁর সৌন্দর্য সকল বর্ণনার মাপজোককে
নাকাল করে
দৃশ্যমান আশ্চর্যের চৌহদ্দিতে কবিতাসদৃশ
নিখুঁত পক্ষী অস্তিত্বে আব্বার সেই কবেকার
লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলির ঝাপটার অস্পষ্ট দাগ
আমাকে উপহাসের খোরাক বানায়
কী ক’রে সম্ভব এত যুগ পরেও কী করে সম্ভব এই উপস্থিতি

খটকার কুয়াশায় আচ্ছন্ন আমি
একটি পুরানো কাহিনীকে নতুন ক’রে ঢেলে সাজাই
হঠাৎ মনে পড়ে আমাদের পরিবারের ওষ্ঠে
উড়ে বেড়ায় এক কুসংস্কারের কালো প্রজাপতি

মরহুম আব্বা তাঁর তল্লাটের নামজাদা পক্ষী শিকারী
শিকারে গিয়ে হরিয়াল বেলে হাঁস চখা আর
শোরখাবের রক্তাক্ত ভার হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরেননি
এমন কোনও দিনের কথা জানা নেই

পার্থ দৃষ্টির অধিকারী তিনি একবারই শুধু ফিরে এসেছিলেন
শূন্য হাতে গোধূলিতে যেদিন সবচেয়ে আশ্চর্য পাখিটি
তাঁর অনুপম দক্ষতাকে বিদ্রুপ ক’রে মেঘে উধাও
যদিও ছররার ধমকে বিচলিত

এখন আম্মা কখনও সখনও কণ্ঠে রূপকথার সুর এনে বলেন
আমাদের পরিবারে যত অঘটন ঘটে
সবকিছুর সঙ্গে জড়িত আব্বার দোনলা বন্দুকের
ফসকানো টিপ ঈষৎ আহত পাখির বেদনার ছায়া

পাখিটির মুখের কাছে
তুলে ধরি শস্যের দানা রুটির টুকরো
কিন্তু চঞ্চু উন্মোচিত হয়নি পানির পেয়ালাও স্পর্শ রহিত
আমার শুশ্রুষা প্রত্যাখ্যানে শস্যের খোসার মতো অসার

এসেছি তোমার হাতে গুলীবিদ্ধ হ’তে
পাখিটি বলে ভাবলেশহীন মানুষের কণ্ঠস্বরে
আমার শিরায় পিতৃরক্তের তোলপাড়
অথচ পক্ষীবধের তালিম আব্বার কাছহ থেকেও নিইনি

যে পাখিকে আব্বা শিকার করতে পারেননি
সে আবছা ক্রোধ এবং অভিমানের ছায়া থেকে
স’রে দাঁড়িয়ে আনন্দের স্বর্গীয় বিন্দু
এবং আমার কবিতায় চিরন্তনতার উদ্ভাসন

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 133

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts