Poem

নিত্যকার বাঁধা মঞ্চে ঘুরছে ফিরছে অসংবদ্ধ যুবা
তীক্ষ্ণ দীপ্ত তরবারি কোষে বুলিবে কখনো খুলবে না।
সর্বাঙ্গে পরের সাজ, শিরস্ত্ৰাণ ঝলসায়, নতুবা
সামান্যই টুকরো প্ৰাণী মঞ্চের বাইরে খুব চেনা ।

রানী নামে ডাকছে যাকে, সত্যকার রানী নয় জানে
সে জানাও অর্ধসত্য, চোখের পাতার ঠিক নিচে
দুলছে তীব্র নীলচে আলো, দু একটি নারীই শুধুসঙ্গে করে আনে
জন্মে জন্মে সে রহস্য, হেসে উঠছে যেন সব মিছে–
এই আলো, এই মঞ্চ, শুধু তার হাতের আঙুলে
ধরেছে হীরের ছুরি যুবকের বুকের সামনে তুলে ।

সাজঘরে সাজ খুলছে, যুবকটি দেখছে লোভী চোখে
কতটুকু দেখতে পাবে, সামান্য যা ঝলসাবে আলোকে ।
মুঘল রানীর বেশ খসে পড়লো, বাঁদিকের স্তনে কালো দাগ
যুবকেরই কীর্তিচিহ্ন–এ ছাড়াও বহু রাত্রি, বহু অনুরাগ
চিবুকে কাজল তিলে, জঙ্ঘায় মসৃণ কটিদেশে
নির্লিপ্ত নদীর মতো ছেয়ে আছে নিষ্ঠুর আশ্লেষে ।

যুবক বুজলো চক্ষু, চামেলি, একবার তুমি আমার হৃদয়
শতধা বিচ্ছিন্ন করো, ক্লান্তি লাগে, নির্জনতা ভয়
যেন রক্তে মিশছে এসে, আমাকে একটু রাখে উষ্ণতার কাছে,
এ যেন চামেলি নয়, চোখ খুললো, নিবিড় হিজল বনে রাত্রি থমকে আছে।

কে আলো নেভালো ? চিৎকার। কেউ নয় যুবকের ভ্রম
সবুজ আলোর রশ্মি কি আশ্চর্য মসৃণ নরম
রেশমের মতো সেই নগ্ন রমণীর দেহ ঘিরে
ছড়িয়েছে ছােট ঘরে, যুবকের দিকে পিঠ ফিরে
নীলকণ্ঠ, শুনতে পাচ্ছে, এবার তোমার সাজ খোলো ।

সাজ খুলবো ? হাহাকার । কিছুই দেখি না অন্ধকারে
একবার হাত ধরো, চামেলি, মিনতি করি, বলো,
তোমার শরীর দেখলে কেন মনে হয় বারেবারে
তোমাকে ঘিরেছে যেন আঁধার সমুদ্র এক, অজস্র উত্তাল টলোমলো
আমার মৃত্যুর মতো। অথচ আমিই যদি সম্রাটের এই সাজ খুলি
নীলকণ্ঠ মজুমদার বের হবে–সকলেই দেখাবে অঙ্গুলি,
ঐ সেই লোকটা যাচ্ছে–নাট্যকার, নারী কিংবা মদ
বাঁচিয়ে রেখেছে যাকে, ভোগ করছে। পরের সম্পদ ।

নকল সাজেই বুঝি বাঁচতে হবে, অন্ধকারে এ অরগাহনে
জীবন বিস্বাদ লাগে, সমুদ্রের চেয়ে আরো লোনা।
তুমি রোজ সাজ খোলো, আমি দেখি, ভাবি মনে মনে
কালকের নাটকে হয়তো মৃত্যুদৃশ্যে আমি আর বেঁচেই উঠবে না।

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 132

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts