Poem

কে ভাসাল জলে তোরে কানন-সুন্দরী!
বসিয়া পল্লবাসনে, ফুটেছিলে কোন্ বনে
নাচিতে পবন সনে, কোন্ বৃক্ষোপরি?
কে ছিঁড়িল শাখা হতে শাখার মঞ্জরী?

কে আনিল তোরে ফুল তরঙ্গিণী-তীরে?
কাহার কুলের বালা, আনিয়া ফুলের ডালা,
ফুলের আঙ্গুলে তুলে ফুল দিল নীরে?
ফুল হতে ফুল খসি, জলে ভাসে ধীরে!

ভাসিছে সলিলে যেন, আকাশেতে তারা।
কিম্বা কাদম্বিনী-গায়, যেন বিহঙ্গিনী প্রায়,
কিম্বা যেন মাঠে ভ্রমে, নারী পথহারা;
কোথায় চলেছ ধরি, তরঙ্গিণীধারা?

একাকিনী ভাসি যাও, কোথায় অবলে!
তরঙ্গের রাশি রাশি, হাসিয়া বিকট হাসি,
তাড়াতাড়ি করি তোরে খেলে কুতূহলে?
কে ভাসাল তোরে ফুল কাল নদীজলে!

কে ভাসাল তোরে ফুল, কে ভাসাল মোরে!
কাল স্রোতে তোর(ই) মত, ভাসি আমি অবিরত,
কে ফেলেছে মোরে এই তরঙ্গের ঘোরে?
ফেলেছে তুলিছে কভু, আছাড়িছে জোরে

শাখার মঞ্জরী আমি, তোরই মত ফুল।
বোঁটা ছিঁড়ে শাখা ছেড়ে, ঘুরি আমি স্রোতে পড়্যে,
আশার আবর্ত্ত বেড়ে, নাহি পাই কূল।
তোরই মত আমি ফুল তরঙ্গে আকুল।

তুই যাবি ভেসে ফুল, আমি যাব ভেসে।
কেহ না ধরিবে তোরে কেহ না ধরিবে মোরে
অনন্ত সাগরে তুই, মিশাইবি শেষে।
চল যাই দুই জনে অনন্ত উদ্দেশে।

Author Bio

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক

More

This post views is 146

Post Topics

Total Posts

16 Published Posts