Poem

এই মধুমাসে, মধুর বাতাসে,
শোন লো মধুর বাঁশী।
এই মধু বনে, শ্রীমধুসূদনে,
দেখ লো সকলে আসি ||
মধুর সে গায়, মধুর বাজায়,
মধুর মধুর ভাষে।
মধুর আদরে, মধুর অধরে,
মধুর মধুর হাসে ||
মধুর শ্যামল, বদন কমল,
মধুর চাহনি তায়। ।
কনক নূপুর, মধুকর যেন,
মধুর বাজিছে পায় ||
মধুর ইঙ্গিতে, আমার সঙ্গেতে,
কহিল মধুর বাণী।
সে অবধি চিতে, মাধুরি হেরিতে,
ধৈরয নাহিক মানি ||
এ সুখ রঙ্গেতে পর লো অঙ্গেতে
মধুর চিকণ বাস।
তুমি মধুফল, পর কানে দুল,
পরাও মনের আশ ||
গাঁথি মধুমালা, পর গোপবালা
হাস লো মধুর হাসি।
চল যথা বাজে, যমুনার কূলে,
শ্যামের মোহন বাঁশী ||

চল কথা বাজে, যমুনার কূলে
ধীরে ধীরে ধীরে বাঁশী।
ধীরে ধীরে যথা, উঠিছে চাঁদনি,
স্থল জল পরকাশি ||
ধীরে ধীরে রাই, চল ধীরে যাই,
ধীরে ধীরে ফেল পদ।
ধীরে ধীরে শুন, নাদিছে যমুনা,
কল কল গদ গদ ||
ধীরে ধীরে জলে, রাজহংস চলে,
ধীরে ধীরে ভাসে ফুল।
ধীরে ধীরে বায়ু, বহিছে কাননে
দোলায়ে আমার দুল ||
ধীরে যাবি তথা, ধীরে কবি কথা
রাখিবি দোহার মান।
ধীরে ধীরে তার বাঁশীটি কাড়িবি,
ধীরেতে পূরিবি তান ||
ধীরে শ্যাম নাম, বাঁশীতে বলিবি,
শুনিবে কেমন বাজে।
ধীরে ধীরে চূড়া কাড়িয়ে পরিবি,
দেখিব কেমন সাজে ||
ধীরে বনমালা, গলাতে দোলাবি,
দেখিব কেমন দোলে।
ধীরে ধীরে তার, মন করি চুরি,
লইয়া আসিবি চলে ||

শুন মোর মন মধুরে মধুরে,
জীবন করহ সায়।
ধীরে ধীরে ধীরে, সরল সুপথে,
নিজ গতি রেখ তায় ||
এ সংসার ব্রজ, কৃষ্ণ তাহে সুখ,
মন তুমি ব্রজনারী।
নিতি নিতি তার, বংশীরব শুনি,
হতে চাও অভিসারী ||
যাও যাবে মন, কিন্তু দেখ যেন,
একাকী যেও না রঙ্গে।
মাধুর্য্য ধৈরয, সহচরী দুই,
রেখ আপনার সঙ্গে ||
ধীরে ধীরে ধীরে, কাল নদীতীরে,
ধরম কদম্ব তলে।
মধুর সুন্দর, সুখ নটবর,
ভজ মন কুতূহলে ||

Author Bio

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক

More

This post views is 207

Post Topics

Total Posts

16 Published Posts