Poem

ও বিল্টু তুই এখন কোথায় আছিস বাবা
তুই এখন আছিস কোথায়,
হাসপাতালে তোর বাপ বলেছিল “ছেলে তো অন্য ঘরে”
সেই ঘরটা কোথায় রে,
আমি সব ঘর দেখেছি ঘুরে

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে
আমি ঘুরে দেখেছি সব ঘর
কোথাও তোর দেখা পাইনি
দেখা পাইনি কোথাও ।
তারপর আর কি
তারপর ছুটির কাগজ হাতে তোর বাপ যখন
আমাকে নিয়ে গেট পার হয়ে
নামলো বড় রাস্তায়,
তখন দেখলাম গোটা কলকাতা শহর
সেজে উঠেছে পুজোর আনন্দে
গোটা কলকাতা শহর
মেতে উঠেছে পুজোর উল্লাসে
মণ্ডপ সজ্জা, প্রতিমা, আলো, আরো কত কী
মোটকথা কোথাও কিছু কম পড়ে নাই রে
কোথাও কিছু কম পড়ে নাই।
তোর বাপ আমাকে বাড়িয়ে বলেছিল অনেক কথা
আমি সেসব পাইনি দেখতে কিছুই
ওই যে রে মগজজীবী না বুদ্ধিজীবী
কি সব বলে না
সেই সব বড় বড় বাবুদের
মোমবাতি হাতে মিছিল টিছিল
সেসব আমি দেখতে পাইনি কিছুই
তোর বাপ মানুষটা চিরকালের
বড় হুজুগে মানুষ
কাগজে বেরোনো তোর ছবি পর্যন্ত
যত্ন করে রেখেছে কেটে
কুলপির গ্রাম থেকে দমদমের খালপাড়ের বস্তি
বাবুদের ঘরে বাসন মেজে ঘর মুছে
কাজের মাসির কাজ
সে দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল দশটা বছর
আমি জানি রে বিল্টু
আমি সব জানি,
একজন কাজের মাসির শিশু
বোমার আঘাতে ঝলসে গেলে
একজন কাজের মাসির শিশু
বোমার আঘাতে মুখ থুবড়ে ছিটকে পড়লে
আতঙ্কে যন্ত্রণায়
” মা-গো মা-গো”বলে চিৎকার করলে
“বাবা জ্বলে যাচ্ছে, জল দাও
আমায় জল দাও” বলে
কাতরে উঠলে ,
বড়জোর বাবুদের টিভিতে আর কাগজে
দু-‘চারদিনের খবর হতে পারে
তার বেশি কিছু না
তার বেশি আর কিছুই না ।
এখন বাবুরা সবাই খুব ব্যস্ত রে বিল্টু
মা আনন্দময়ীর আগমনে
বাবুরা এখন ব্যস্ত সবাই
মণ্ডপ সজ্জা, প্রতিমা, আলো,
কোথাও কিছু কম পড়ে নাই রে
কলকাতা শহরে কোথাও কিছু কম পড়ে নাই,
শুধু একজন কাজের মাসির-
থাক সে কথা,
জানিস বিল্টু
এবার আমি ভেবেছিলাম মুখ দেখবো না ঠাকুরের
আর কখখনো দেখবো না ওই মুখ,
তারপর কি হল জানিস
কাগজের লোকেরা প্রথম পাতায়
যে ছবিটা ছেপেছিলো তোর
সেই যে রে লাল চেক জামা পরা
তোর ডাগর চোখে চেয়ে থাকা সেই ছবিটা
সেটা বুকে চেপে আঁকড়ে ধরতেই
বুকের ভিতর কেমন যেন একটা হতে লাগলো আমার
তখনই ঠিক করলাম
যাবো
ঠাকুর দেখতে আমি যাবো
একাই যাবো
হাতজোড় করে মাকে বলবো
“মাগো, আমি খালপাড়ের বিল্টুর মা সীতা
জন্মের পরে বেছে বেছে
এই নামটাই রেখেছিল আমার মা
কেন রেখেছিল
কি ভেবে রেখেছিল
সে আমি জানি না
তোমায় মিনতি করি মা
তুমি আমার সীতা নামটা বদলে দিও
জনম দুখিনী সীতা নামটা বদলে দিও
আমি আর সীতা হতে চাই না মা
এবার আমি দুর্গা হতে চাই
অসুরদলনী দুর্গা
শিশুঘাতী অসুরদলনী দুর্গা।

Author Bio

আঞ্চলিক বা লোক কবি বলে খ্যাত পশ্চিমবঙ্গের দেবব্রত সিংহ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাঁকুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় লেখা তার ‘তেজ’ কবিতার মাধ্যমে দুই বাংলার কবিতাপ্রেমীদের কাছে পরিচিতি লাভ করেন।

More

This post views is 288

Post Topics

Total Posts

8 Published Posts