Poem

আমিও তো মশাল ধরেছি

জীবনানন্দ দাশ

আমিও তো মশাল ধরেছি
কোনো সৈনিকের নয়
সূক্ষ্ম শীর্ণকায় মঠের মতন
নব নব জন্মের দুর্যোগ—মরণের জন্ম বিম্ব
ভৈরবীর কপালে টিপের মতো
আধেক তা অন্তিম চাঁদের—মেধাবী সূর্যের তবু।

তোমরা ভগ্নাংশ নাও—জ্যোৎস্না গোধূলির
স্নিগ্ধ হও—মৃত্যু ভালোবাসো
আমাকে দেখিতে দাও সেই রূপ—
ফুটপাতে কুয়াশার রমণীরা ঘুমাতেছে
শেলফের অন্ধকারে বক্র, ভগ্ন হেঁয়ালির রাশি
নগরীর দিবালোকে—দিকে দিকে গম্ভীর গিজের মূর্তি
এরা সব ভালোবেসেছিল। তাই গিয়েছে পাথর হয়ে—মৃত্যু হয়ে।

গর্ভিনীর স্মৃতি বিস্মৃতির সাধ
শোণিতের গূঢ়তর সংস্কার তবু—
নব নব আভা পায় অপ্রেমের কথা ভেবে
কুয়াশার অই পারে অমোঘ সেতুকে ভালোবাসে
তাই হেমন্তের দেশে বসে শোণিতের শব্দ শোনা যায়
পাঁজরের সিঁড়ি বেয়ে হৃদয়ের দিকে অবার সে নিষ্কাশিত সমুদ্রের মতো
লক্ষ লক্ষ মাইল তরঙ্গের পথ দিয়ে অনেক সুঘ্রাণ পাখি উড়ে আসে
আমাদের এই নিচু, ধূম্র মধ্যপথে
তাহাদের কামনার শ্রম—মুহূর্তের ক্ষান্তি চায়
তির্যক ডানা তুলে ভূমধ্য সিন্ধুর দিকে উড়িবার আগে
এইসব ছবি; আশ্চর্য অন্যায় আলো;
জন্মের দুর্যোগ থেকে ঢের দূরে—
পাঁকের হেঁয়ালি, বিপ্লবের মুহূর্তের থেকে—প্রেম থেকে।

Author Bio

জীবনানন্দ দাশ, ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মিলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের

More

This post views is 439

Post Topics

Total Posts

151 Published Posts