Poem

সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণী?
নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!

অল্কার পানে বলাকা ছুটিছে মেঘ-দূত- মন মোহিয়া
চঞ্চুতে রাঙ্গা কলমীর কুঁড়ি- মরতের ভেট বহিয়া।

সখীর গাঁইয়ের সেঁউতি- বোঁটার ফিরোজায় রেঙ্গে পেশোয়াজ
আসমানী আর মৃন্ময়ী সখী মিশিয়াছে মেঠো পথ- মাঝ।

আকাশ এনেছে কুয়াশা- উড়ুনী, আসমানী- নীল- সাঁচুলী,
তারকার টিপ, বিজলীর হার, দ্বিতীয় – চাঁদের হাঁসুলী।

ঝরা বৃষ্টির ঝরঝর আর পাপিয়া শ্যামার কূজনে
বাজে নহবত আকাশ ভূবনে- সই পাতিয়েছে দু-জনে!

আকাশের দাসী সমীরণ আনে শ্বেত পেঁজা- মেঘ ফেনা ফুল,
হেথা জলে থলে কুমুদে আলুথালু ধরা বেয়াকুল।
আকাশ০ গাঙ্গে কি বান ডেকেছে গো, গান গেয়ে চলে বরষা,
বিজুরীর গুণ টেনে টেনে চলে মেঘ- কুমারীরা হরষা।

হেথা মেঘ পানে কালো চোখ হানে মাটির কুমার মাঝিরা,
জল ছুড়ে মারে মেঘ-বালা দল, বলে- ‘চাহে দেখ পাজীরা!’

কহিছে আকাশ, ‘ওলো সই, তোর চকোরে পাঠাস নিশিথে,
চাঁদ ছেনে দেবো জোছনা- অমৃত তোর ছেলে যত তৃষিতে।
আমারে পাঠাস সোঁদা- সোঁদা- বাস তোর ও-মাটির সুরভি,
প্রভাত ফুলের পরিমল মধু, সন্ধ্যাবেলার পুরবী!’

হাসিয়া উঠিল আলোকে আকাশ, নত হ’ইয়ে এল পুলকে,
লতা-পাতা-ফুলে বাঁধিয়া আকাশে ধরা কয়, ‘সই, ভূলোকে
বাঁধা প’লে আজ’, চেপে ধরে বুকে লজ্জায় ওঠে কাঁপিয়া,
চুমিল আকাশ নত হ’ইয়ে মুখে ধরণীরে বুকে ঝাঁপিয়া।

Author Bio

কাজী নজরুল ইসলাম, রাঢ় বাংলায় জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি কবি এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি

More

This post views is 78

Post Topics

Total Posts

365 Published Posts