Poem

অর্জুনের রাজ্য

নির্মলেন্দু গুণ

আমি কোনোদিন যুদ্ধ দেখিনি, শুনেছি বাবার মুখে,
সেই কবে বাবা যখন সবেমাত্র নববিবাহিত–;
আমি নবদম্পতির প্রেম, জননীর গভীর লজ্জায়
চিহ্নহীন অচিন বালক, সেই কবে ১৯৩৯-এর মাঝামাঝি
একদিন হঠাৎ বিকেলে একঝাঁক পাখিদের মতো
কিছু বোমারু বিমান বাবার ওপর দিয়ে,
আমাদের গ্রামের মানুষ আর বুড়ো বট গাছটার পাতাগুলো
ছুঁই-ছুঁই করে উড়ে গিয়েছিল বঙ্গোপসাগর হয়ে
জাপানে, বার্মায়।

আমি কোনোদিন যুদ্ধ দেখিনি, শুনেছি অন্যের কাছে,
ইতিহাসে, পাঠ্য সিলেবাসে। পরীক্ষায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
এসেছিল একবার, আমি যুদ্ধ না-দেখেই চর্বিত চর্বনে
লিখেছি অনেক কথা, সভ্যতা বিরোধী এর নিপুণ ভূমিকা।

চীন আর ভারতের সীমান্ত বিরোধে, ১৯৬২-তে,
আমার এক আত্মীয়ের দূরের আত্মীয় মারা গেলে
আমি তাকে কাঁদতে দেখেছি সারারাত,
যুদ্ধে নিহত তিনি, তাই বুঝি বেশি করে কাঁদা, অথচ
ব্লাডপ্রেসারের রোগী কল্যাণের বাবা এমনিতেই মারা গেলে
আমরা কাউকে কিছু দোষ দিতে পারিনি তখন,
কল্যাণ তো কেঁদেছে তখনও।

১৯৬৫-তে আমরা বড় আশঙ্কায় ছিলাম,
বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন–
–তার এক ছেলে শত্রুদেশে, সেনাবাহিনীতে,
তাই ভয়। লাহোরের কাছে যখন ট্যাঙ্ক যুদ্ধ হয়,
তখন ঢাকায় ছিল নিষ্প্রদীপ আলোর মহড়া।
আমি কল্পনাকে ছুঁতে গিয়ে অন্ধকারে হাত রেখে
কল্পনার মায়ের শরীরে, বলেছি যুদ্ধের কথা,
যুদ্ধ হোক, যেখানেই যুদ্ধ হোক জয়ী হবে
শক্তিশালী বৃটেন, ইউএসএ।

এরোপ্লেন আসে না এখানে, শুধু পত্রিকায়
বোমারু বিমান থেকে বোমা ঝরে।
কালো ট্যাঙ্ক মুখরা নারীর মতো অসভ্য ভাষায়
কী কথা বোঝাতে চায় আমি তার কিছুই বুঝি না।
শুধু জেনেছি অন্যের কাছে, বাবা যখন নববিবাহিত,
আমি নবদম্পতির প্রেম, জননীর গভীর লজ্জায়
চিহ্নহীন অচিন বালক, তখন পাখির মতো
ঝাঁক বেঁধে হাজার বিমান উড়ে যেতো;
বঙ্গোপসাগর হয়ে জাপানে, বার্মায়।

Author Bio

নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী (জন্ম ২১ জুন ১৯৪৫, ৭ আষাঢ় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ), যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত, একজন বাংলাদেশী কবি এবং চিত্রশিল্পী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন।

More

This post views is 141

Post Topics

Total Posts

107 Published Posts