Poem

আগুনের ফলা টেনে

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ডুরেকাটা সিলকপাতা মনস্বী পড়ুয়া দেবদারু
পিছনে তামাম মাঠ বড়োসড়ো সবুজ পাপোষ এই প্রতিষ্ঠানে
সিং-দরজা, মধুবনী গোঁফ, বাঁধানো চাতাল জুড়ে
দেশলাই-বাক্সর মধ্যে দিয়ে চোখ চলে যায় শূন্য করিডোর,
আলো, ভাঙা বরফের রাঙা চাই- বিষম ত্রিভুজে, পড়ে আছে
মাড়াবার কেউ নেই, ঠেলে ফেলে দেবে ছাঁচে তেমন লোকের
প্রকৃত অভাব, এই পড়ন্ত বিকেলে, সন্ধ্যার চৌকাঠে ঠেকে
জনশূন্য করিডোর, উত্থানপতনময় সিঁড়ির মারবেল, পড়ে আছে
দরোয়ান-টুঙি থেকে ধোঁয়া ওঠে কুণ্ডলী পাকিয়ে, ঝরে বটফল…
থ্রোন, সকালে সেখানে ব’সে ঘন্টা শোনে ধীমান-ধীমতি
ক্লাসরুম ভরে যায় মৌমাছিতন্ত্রের মন্ত্রপাঠে
মণিপদ্‌মে হুং ওঁ মণিপদমে…

ঢাকাবারান্দার খোলে চাকা কাদামাটি নিয়ে আসে
বুড়োসুড়ো কাঁচাঘাস ফেলে যায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
মনান্তরের মতো দাগ, গাড়ি ঝেড়ে দেয় উৎক্ষিপ্ত পেটরোল
স্বাভাবিকতার মাত্রা ঠিক রাখতে প্রাণপণ করে
নিজের সন্ততি এনে সেই পুরাতন ঘরে, বেনচে বসতে
সাধ হয়। যেন বসে, যেন কাটে পেনসিলকাটার
ছুরিতে নিজের নাম হাইবেনচ, দেয়ালে, পাথরে।

সাধ হয়, দেবদারু-ছায়ার ভিতরে, থ্রোনে, বসে কয় বরষাপীড়িত
সেদিন মনের কথা
মেঘের চাঁদোয়া ফুটো, বৃষ্টি পড়ে সবুজ ছাতায়
পিছনে দেবদারু ফল রাঙা মরামের কোণে উজ্জ্বল বীজের
আগুনের ফলা টেনে বের করে গাছ হবে ব’লে।
গাছ হয়!

Author Bio

শক্তি চট্টোপাধ্যায় (জন্ম: নভেম্বর ২৫, ১৯৩৩ - মৃত্যু: মার্চ ২৩, ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক, যিনি জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত।

More

This post views is 53

Post Topics

Total Posts

111 Published Posts