Poem

হুইল চেয়ারে প্রজাপতি

শামীম আজাদ

মানুষের কতো রকম প্যাশন থাকে,
আমারও ছিলো
সব বদলে গেছে
এখন আছে শুধু একা কথা বলবার।

ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যখন একা হাঁটি
মনে হয় জলে ভাসি
টের পাই এই উতলা জলখণ্ডের নিচে
রয়েছে মৃন্ময়ীর মসৃণ তলপেট।

একটু এগুলেই পাওয়া যায়
টেসকোর বিরাট বাজার
দরোজায় মাস্ক পরা দ্বাররক্ষী আর স্যানিটাইজার
ভেতরে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের
নানান খাবার।

সামনেই বেঞ্চ এর গালে
হাত রেখে হোমোসেপিয়ান হোমলেস।
তার গায়ের ও মাদকের তীব্র গন্ধ রেখে
একটু এগোলেই গণ গ্রন্থাগার।

সে যে কি ভরসা
যেন মাটি মহামায়া,
একবার পা দিলেই চোখ যায়
পানসী থেকে পর্বতে অথবা
শিখা থেকে শিখরে।

পাশেই প্রাচীন বাইবেল মলাটের মত
ভিক্টোরিয়ান আমলের
থাম ও স্থাপত্য নিয়ে নীরব টাউন হল।
রোমান রোডে কফি শপে বা কস্টা ক্যাফেতে
বছরে একবার শীত কেটে কেটে
ক্রিসমাস কড়চা জমে উঠলে ভাঙে তার নীরবতা।

আমার ফ্ল্যাটের সামনের
পথটাও বেশ নিরিবিলি।
সেখানে হাওয়ার হুজ্জতি,
মেঘের মন্দাক্রান্তা ও রোদের পরত
তবু কিছুতেই স্বস্তি মেলে না।
এক বেওয়ারিশ শব হবার নিমিত্তে
এই বাদামী বিন্দু শুধু রাস্তায় নেমে যায়।

ঘরে থাকলেই ভয় হয়
মনে হয় পায়ের নিচে মাটি নেই,
নেই কোন পয়মন্ত পাথর।
আমি ততক্ষণ উড়ি
প্রাচীন এ পৃথিবী এ্যান্টেনায়
ঝুলে থাকি এক বিচিত্র ভাষার সুতোয়।
সে ভাষার নির্মিতি এই গায়ের বাকল দিয়ে,
চোখের চশমা দিয়ে, জুতা দিয়ে,
স্বাদের আস্বাদ দিয়ে, নতুন চুম্বন দিয়ে।

কিন্তু কোথাও না কোথাও তো
আমাকে রাখতে হবে।
আর আমি ভাসতে চাহি না
এই শূন্যের শিলায়।

হাঁটতে বেরুলেই পেয়ে যাই
বেশ কিছু ক্ষীণকায় গাছ
আর তাহাদের আলো ছায়ায় মোড়ানো
এই ডিম্বাকৃতি পড়ার ঘর
ভীতিহীন স্মৃতির গৌরব।

এখানে আমারই মত
হুইল চেয়ারে হেঁটে হেঁটে কিছু
প্রজাপতি, পতঙ্গ, পাখিও ফিরে আসে
আমাদের দেখা হয়
আমরা কেউ কথা বলি না ঠোঁট খুলে
বলি মনে মনে ।

Author Bio

শামীম আজাদ, কবি ও লেখক, বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী। কিন্তু দীর্ঘ বিলেতবাসেও যে মানুষ কখনো হতে পারেননি প্রবাসী, তিনি অনাবাসী কবি শামীম আজাদ, একদার সাংবাদিক ও শিক্ষক। ১৯৯০ সালে শামীম আজাদ

More

This post views is 235

Post Topics

Total Posts

17 Published Posts