Poem

১৪০০ সালের সূচনায়

শামসুর রাহমান

জীবনানন্দের কবিতার সঙ্গে সারারাত সহবাস করে
বেদনা ভুলতে গিয়ে আরো বেশি বেদনার্ত হই।
১৪০০ সালের আশা সত্তাময় মেখে নিতে চেয়ে
ক্রামগত বুনো অন্ধকারে ডুবে যাই।

ক’দিন দু’চোখে এক ফোঁটা ঘুম নেই, চর্তুদিকে বিভীষিকা
নানান মুখোশ পরে নাচ জুড়ে দেয়, অন্ধকারে
আমার একান্ত পাশে মৃত্যু শুয়ে তাকে,
হিয়ায়িত মিসাইল যেন।

হায়, সোমালিয়ায় মরছে কারা? মানুষ, মানুষ।
হায়, বসনিয়ায় মরছে কারা? মানুষ, মানুষ।
হায়, বসনিয়ায় ধর্ষিতা কারা? মায়েরা, বোনেরা।
বোম্বে, আর দিল্লী নগরীতে খুন হলো কারা? মানুষ, মানুষ।
ভোলায় আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরেছিল কারা? মানুষ, মানুষ।
প্রচ্ছন্ন মানিকগঞ্জে ধর্ষিতা হয়েছে কারা? মায়েরা বোনেরা।
সেখানে লুণ্ঠিত কারা? মানুষ, মানুষ।
এখানে লুণ্ঠিত কারা? মানুষ, মানুষ।

‘মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব থেকে যায়’-
মানবতা প্রায়শই ব্যধভূমিতে চলেছে, হায়।

মৃত্যু প্রতিদিন খবরের কাগজে নিজের মুখ
পাখি-ডাকা সকালে দেখতে পেয়ে নিজেই আঁৎকে ওঠে খুব;
তবু মৃত্যু নিজেকে সাজিয়ে রাখে কম্পিউটারের
ঝকঝকে হরফে এবং বিজ্ঞাপিত হয় ভাঙনপ্রবণ বিশ্বময়।

আমরা কি মৃত্যুর ফরমাশ খেটে নিত্যদিন মনুষ্যত্ব
শ্মশানে ও গোরস্থানে ফেলে রেখে মানুষের প্রাণ
লুটে নেবে? ১৪০০ সালের সূচনায় বিশ্ববাসী
এসো আজ আমরা সবাই হৃদয়ের গানে গানে
গোধূলির মেঘ থেকে রক্তচিহ্ন আর ষড়যন্ত্রকারীদের
কালো খাতা থেকে সব আতঙ্কের নকশা মুছে ফোলি।
চারণ কবিরা সুরে দশ দিগন্তে রটিয়ে দিন-
‘সকল মানুষ, বৃক্ষ-লতাগুল্ম, পশুপাশি শান্তিতে থাকুক।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 136

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts