Poem

আমরা কি যেতে পারি

শামসুর রাহমান

আরিচার ঘাটে পৌঁছেতেই
পাক্‌না ফলের মতো সূর্য পড়ে গেল
নদীর পানিতে।
মাছের আঁশটে গন্ধ ভেসে আসে, দূরে
নৌকা চলে যায়। বিশ্রামের
ছায়াটুকু পোহাচ্ছে টয়োটা নিরিবিলি।
নড়েচড়ে বসে
ফ্লাস্ক থেকে তুমি ঢাললে চা,
মুখের ভেতরে
পেস্ট্রির সুঘ্রাণ গলে যায়।
বয়সিনী ভিখিরিনী জানালার ফ্রেমে, ওর শীর্ণ খড়ি-ওঠা
প্রসারিত হাতে তুমি তুলে দিলে স্ন্যাক্‌স হে সুজাত।
আবার শহরমুখী, সন্ধ্যার ঘোমটা-পরা আসমান, আর
বৃক্ষময় পিচপথে ধাবমান যান,
একটি একাকী লোক, হয়তো হাট-ফেরা
ডোবে কুয়াশায়।

তোমার সোনালি বাহু মাছের ধরনে ঝলসিত
বারবার; ঈষৎ রঙিন ঠোঁটে, চুলে,
কর্ণমূলে, গ্রীবার ঢালুতে ক্যাসেটের
সংগীত ছড়ায় রঙধনু
এবং আমার হাত ডাকে
তোমার হাতের উষ্ণতাকে মতিচ্ছন্ন মানুষের
মতো কী ব্যাকুল।
আমার ভেতরকার স্বেচ্ছাচারী পাঁজর, পাঞ্জাবি
ফুঁড়ে লুটোপুটি খায় আমারই সত্তায়।
তোমার পাঁচটি আঙুলের স্রোত বেয়ে
একজন নারী, বড় একা, তারার আগুনে গড়া,
আমার ভেতরে
গোপনে প্রবেশ করে অন্তরাল ছিঁড়োখুঁড়ে, স্পিডোমিটারের
কাঁটা ঊর্ধ্বগতি;
রাত বাড়ে, আমার মুঠোর মৃদু চাপে
তোমার আঙুল হয়ে যায় কণিকার কণ্ঠস্বর।

ফিরে এসে টিপি
সফেদ কলিংবেল, ঘরে ঢুকে শুই বিছানায়।
তখনও তোমার ঘ্রাণ, রাত্রির গহন
জঠরের নিবিড় নরম,
দূরগামী নৌকা,
হাট-ফেরা লোক, ঝোপঝাড়,
তোমার বিচ্ছিন্ন চলে-যাওয়া,
নির্জন পথের হাহাকার
জেগে থাকে সত্তাময়। কী যেন আমার মধ্যে জ্বলে আর নেভে
জোনাকিপ্রতিম
বারংবার; ইচ্ছে হয়, আবার সেখানেই যাই এই মুহূর্তেই।
আমরা কি যেতে পারি একই স্থানে পুনরায় একই মন নিয়ে?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 168

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts