Poem

যতই হই না কেন মনোযোগী, ভুলচুক ছায়ার মতন
করছে অনুসরণ আমাকে রাত্রিদিন।
এখনও কোকিল বসন্তকে দ্যায় সুরের গৌরব
কী সহজে, পাখি ঠোঁটে খড়-কুটো নতুন বিশ্বাসে বয়ে আনে, বানায় আপন ঘর শিল্পীর নিষ্ঠায়;
হরহামেশাই
দেখি পথে কর্মিষ্ঠ শ্রমিক তোলে মাটি
কোদালের ঘায়ে,
শ্রমের নিপুণ ছন্দে দোলে তার পেশল শরীর।

কী-যে হয় এ আমার, প্রত্যহ কিছু না কিছু ভুল
করে ফেলি, অথচ দেখছি চতুষ্পার্শ্বে কত লোক
তাদের নিজস্ব কাজ সারে চমৎকার
রূপদক্ষতায়।

আমাকে দেখুন,
সামান্য একটা সিগারেট ধরাতে গিয়েই, হায়,
কয়েকটি ঢ্যাঙা কাঠি খরচা করে ফেলি
এবং ছিটিয়ে দি ছাই ঘরময়। বরাবর
ঘর গোছানোর শখ আমার, অথচ যতবার
সোৎসাহে গোছাতে যাই, ততবার সব
নয়-ছয় হয়ে যায় বড় বেশি আর
কখনো বিদেশে গেলে সুটকেশ উথাল-পাথাল
করেও সবচে’
জরুরি জিনিসটাই খুঁজে পাই না বস্তুত।

চেনা মনে করে বারংবার রাস্তার লোকের দিকে
ছুটে যাই, হাত ছুঁই। কিন্তু ভুল ভাঙলে অচেনা
সে ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতেও ভুল হয়ে যায়।
যখন কাউকে প্রাণ খুলে
দরাজ গলায়
বিষম ডাকতে ইচ্ছে হয়, আমার কণ্ঠনালিতে
রাজ্যের কুয়াশা এসে জমে; প’ড়ে থাকি এক কোনে
স্বরহীন, অসহায়, একা।

একটি নতুন
কবিতা লেখার জন্যে সারারাত জেগে
থাকার উত্তাপ নিয়ে অস্তিত্বের ভিতর মহলে,
ভোরের আলোয়
জ্বালাধরা টকটকে চোখে দেখি, হা কপাল, সাদা
কাগজে কখন সাজিয়েছি ভুলভাল পঙ্‌ক্তিমালা,
যেমন ক্যাপ্টেন দ্যাখে লাইনে দাঁড়ানো
তার সেনাদের কারো মাথায় সবুজ
হেলমেট নেই, কারো পায়ে শুধুমাত্র জীর্ণ মোজা,
ঝকঝকে বুট নেই, কেউবা নিদ্রায় জবুথবু।

দোহাই আপনাদের, আপনারা কেউ
আমাকে কখনো
নেভাতে বলবেন না পাড়ার আগুন।
আমি বালতিটা হাতে নিলেই আগুন আরো বেশি
ফুঁসে ফুঁসে উঠবে এবং হয়ে যাবে আরো জেদী।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 152

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts